এ ভাবেই রোজ দূষিত হচ্ছে শিলিগুড়ির বাতাস। — বিশ্বরূপ বসাক
এর আগে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনে এককাট্টা হয়েছিলেন শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমীরা। এ বার তাঁরা যান-দূষণ কমাতেও জোট বাঁধছেন। প্রশাসনের কাছে তাঁদের আর্জি, যান-দূষণ কমাতে দিল্লিতে যে ভাবে জোড়-বিজোড় নম্বরের গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা হয়েছিল, শিলিগুড়িতেও তেমন হোক। বা কোনও বিশেষ দিন থাকুক ‘নো কার ডে’ হিসেবে। সে দিন ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে না। অথবা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বড় রাস্তার সংযোগকারী গলিকে ভেহিকেল ফ্রি’ বা গাড়ি মুক্ত করা হোক।
এই লক্ষ্যে সমীক্ষা করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। শহরবাসীদের উৎসাহ দেখে পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার তরফেও যান দূষণ কমাতে কী কী করা যায়, তা নিয়ে নাগরিক কনভেনশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই দাবির যৌক্তিকতা মানছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও। তবে রাতারাতি দিল্লির পথে হাঁটার পক্ষে নন তিনি। বললেন, ‘‘এটা হুটহাট পদক্ষেপের বিষয় নয়। যান দূষণ কমাতে সমীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এগোতে হবে। আমরা সকলের মতামত নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পদক্ষেপ করব।’’
সরকারি সূত্রের খবর, পুজোর পরেই যান-দূষণ রোধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। শিলিগুড়ি পুরসভায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল পুরসভায় পরিবেশ বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটকের আমলে। সুজয়বাবু বর্তমানে বরো চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘শহরবাসীরা চান বলে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করেছে শিলিগুড়ি। এখন যান দূষণ রুখতে নাগরিকদের সামিল করলেই কাজটা করা সহজ হয়ে যাবে।’’ এই মুহূর্তে শিলিগুড়ি পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ যিনি, সেই মুকুল সেনগুপ্তের ধারণা, দিল্লি যে পথ দেখিয়েছে দূষণ রুখতে, সেটা শিলিগুড়ির পক্ষেও ভাল হবে।
তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আমারাও রাজ্য সরকারকে জানাব।’’
শিলিগুড়িতে যানবাহনের সংখ্যা এত দ্রুত গতিতে বাড়ছে যে উদ্বিগ্ন পরিবহণ দফতরও। জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গড়ে দিনে শতাধিক নতুন যানবাহনের নথিভুক্তি জমা পড়ত কয়েক বছর আগেও। সাম্প্রতিক সময়ে কোনও সমীক্ষা হয়নি। তবে তার সংখ্যা যে কয়েক গুণ বেড়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই পরিবহণ দফতরের অনেকেরই। দফতরের এক কর্তা জানান, শহরের মধ্যে কয়েকশো খুব পুরানো গাড়ি চলছে বলে দূষণের হার
লাফিয়ে বাড়ছে।
পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা জানান, দিল্লির মতো ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে এক দিন জোড় নম্বর, এক দিন বিজোড় নম্বরের গাড়ি পথে নামতে দেওয়ার বিষয়টি শিলিগুড়িতে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তবে এর পাল্টা মতও আছে। বাসিন্দাদের একটি অংশ বলছে, দিল্লির মতো বড় শহরে যদি সম্ভব হয়, তা হলে শিলিগুড়ির মতো ১০ লক্ষের কম জনসংখ্যার শহরে তা হবে না কেন?
শিলিগুড়ির একটি নাগরিক সংগঠনের অন্যতম মুখপাত্র দুর্গা সাহা মনে করেন, যান দূষণের সমস্যা মেটাতে দ্রুত নাগরিক কনভেনশন করে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যান দূষণ রোধের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করতে বারবার অনুরোধ করছি। কিছুটা কাজও হচ্ছে। এখন রাজ্য সরকার যান নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করুক। সব রকম সহযোগিতা করব।’’
নাগরিক সংগঠনের এক কর্তা তথা আইনজীবী রতন বণিক মনে করেন, পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু পদক্ষেপ করলেই বোঝা যাবে, কোনটি আমজনতার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। রতনবাবু জানান, ইতিমধ্যেই একাধিক নাগরিক সংগঠন, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তো বটেই, শহরের নেতা-কর্তা-আমলাদের সঙ্গে পরিবেশপ্রেমীরা যোগাযোগ শুরু করেছেন। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, প্রায় সকলেই শিলিগুড়িকে যান-দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষপাতি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন, ‘‘দিল্লির মতো ‘অড-ইভেন’ নম্বরের গাড়ি চালানোর কথা এখনই ভাবার মতো জায়গা হয়েছে কি না, দেখতে হবে। তবে বছরে এক দিন গাড়ি চালানো বন্ধ তো রাখা যেতেই পারে। প্রতীকী হিসাবে তা বাসিন্দাদের সচেতন করতেও সহায়ক হবে।’’
নাগরিকদের দাবির বিষয়টি আঁচ করছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘যান-দূষণ রুখতে ব্যবস্থা তো নেওয়া দরকার। এক এক দিন নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আমরা ভাবনা চিন্তা করছি।’’