খুলে যাচ্ছে দার্জিলিঙের টাইগার হিল। ফাইল চিত্র।
শীত পড়ার আগে দার্জিলিঙে বেড়াতে ইচ্ছুক বাঙালি পর্যটকদের কাছে স্বস্তির খবর! গোর্খা গাড়িচালকদের ধর্মঘটে এক দিন কার্যত অচল থাকার পর বুধবার থেকেই খুলে যাচ্ছে দার্জিলিঙের টাইগার হিল। মঙ্গলবার থেকে এখানে টানা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল গোর্খা চালক সংগঠন। তবে বুধবার জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)-এর চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অনীত থাপার আশ্বাসের পর সেই ধর্মঘট তুলে নিলেন সংগঠনের নেতৃত্ব। যদিও টাইগার হিলে টাকা আদায় নিয়ে সংগঠনের অভিযোগের স্থায়ী সমাধান হয়নি।
মূলত, পর্যটক এবং দার্জিলিংয়ের সুনামের কথা মাথায় রেখে সংগঠনের তরফে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয় অনীতের সঙ্গে৷ তিনিই একপ্রকার সমাধানসূত্র বার করেন।
প্রসঙ্গত, টাইগার হিলে টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার বেঁকে বসে গোর্খা চালক সংগঠন৷ তাদের অভিযোগ, পুলিশ, বন দফতর ও পর্যটন বিভাগ— সব তরফ থেকেই টাইগার হিলের উন্নতির নামে পর্যটক এবং গাড়িচালকদের থেকে টাকা আদায় করছে৷ অথচ টাইগার হিল ভিউ পয়েন্টে উন্নতির লেশমাত্র নেই। ওয়াচ টাওয়ার তো দূর অস্ত্, নেই চা-কফি শপও। পর্যটকদের জন্য সুলভ শৌচালয় থেকে রাস্তা, সবেরই বেহাল দশা। কিন্তু বছরের পর বছর তিন দফতর মিলে টাকা আদায় চলছেই। সংগঠনের দাবি, টাকা আদায় নিয়ে ঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। যে কোনও একটি দফতরকে টাকা আদায় করতে হবে এবং ঠিকঠাক সুবিধা দিতে হবে পর্যটকদের।
শনিবার দার্জিলিং প্রেস গিল্ডে সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের দাবি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে না হলে মঙ্গলবার থেকে টাইগার হিল বয়কট করবেন তারা। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার পুরোপুরি বন্ধ ছিল টাইগার হিল ভিউ পয়েন্ট। এর পর তড়িঘড়ি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন দার্জিলিং এসডিও দুলেন রায়। তবে বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ওই বৈঠক থেকে এ অচলাবস্থার কোনও স্থায়ী সমাধান মেলেনি। যদিও এই বৈঠক থেকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে অনীতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কার্যত তিনিই সুরাহার রাস্তা দেখান।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অল ট্রান্সপোর্ট জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সভাপতি এসএন প্রধান বলেন, ‘‘এসডিও সাহেবের সঙ্গে মিটিংয়ে কোনও সমাধান বার না হওয়ায় আমরা অনীত থাপার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করি। যোগাযোগ করি জেলাশাসকের সঙ্গেও। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বয়কট উঠিয়ে নিয়ে গাড়ি চালু করার অনুরোধ করবেন তিনি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের সঙ্গে বসে তিনি এই সমস্যার সমাধান করবেন। অন্য দিকে, অনীত থাপা আমাদের বয়কট উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করেন৷ বুধবার থেকে জিটিএ পর্যটন দফতর, বন দফতর বা পুলিশ— কেউ টাকা নেবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন অনীত থাপা। আশা করি, রাতের মধ্যে সমস্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলে কাজ করবেন তিনি। জিটিএ চিফের উপর আস্থা রেখেই বুধবার ভোরবেলা থেকে পর্যটক নিয়ে আমরা টাইগার হিল ভিউ পয়েন্টে গাড়ি পাঠাব। আসলে তিন বছর ধরে এরা টাকা নিচ্ছে। কিন্তু আজও সেখানে পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত পর্যন্ত নেই। অনেক অসুবিধা রয়েছে৷’’
এই মুহূর্তে প্রচুর পর্যটক রয়েছেন পাহাড়ে। ফলে এই ধর্মঘটের জেরে সমস্যায় পড়তেন তাঁরা। দার্জিলিং এসডিও দুলেন রায় বলেন, ‘‘জিটিএ পর্যটন দফতর ২০ টাকা, ফরেস্ট ৫০ টাকা ও পুলিশ ১০ টাকা করে পর্যটক বা গাড়ি পিছু ধার্য করছিল৷ যা নিয়ে ড্রাইভার বা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। নানা রকম অসুবিধার কথাও তারা জানায়। যে কারণেই বয়কটের ডাক দিয়েছিল সংগঠন। যদিও পুলিশ তাদের ধার্য করা অর্থ আর নেবে না৷ তবে বয়কট তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন জেলাশাসক। ডিএম জানিয়েছেন, আগামী মাসে সংগঠনের সঙ্গে মিটিং করে সমস্যার সমাধান করবেন। তাদের সঙ্গে জিটিএ চিফের কী কথা হয়েছে, তা আমি বলতে পারব না।’’