দখলমুক্ত নকশালবাড়ি এলাকা। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ পৌঁছানোর তিন দিনের মধ্যে নকশালবাড়িতে খাসজমি দখলমুক্ত করার কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নকশালবাড়ির হাতিঘিসা এলাকার এশিয়ান হাইওয়ে-২-এর পাশে, প্রায় দুই একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ‘আর্থমুভার’ যন্ত্র দিয়ে বেআইনি নির্মাণ, সীমানা পাঁচিলও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নকশালবাড়ির ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে এ দিন ১.৬১ একর সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযান নিয়মিত চলবে।’’এ সবের মধ্যেই এ দিন শিলিগুড়়ি শহর লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লকের সহ-সভাপতি তথা জমি কেলেঙ্কারিতে ধৃত গৌতম গোস্বামীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের জেলায় জেলায় জমি জবরদখল, জমির অবৈধ কারবার নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়ির পাশে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে জমির দখল-পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে সরকারি আধিকারিকদের একাংশকে একাধিক বার সতর্ক করেছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভপ্রকাশের পরে, দলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক (সদ্য বহিষ্কৃত), সহ-সভাপতি গৌতম গোস্বামী গ্রেফতার হন। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন এলাকার জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। সেখানে গত ৮ জুলাই নকশালবাড়ির পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা হাতিঘিসায় দলের অঞ্চল সভাপতি আসরফ আনসারি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। দাবি করেন, জমি- মাফিয়ারা এলাকার সক্রিয় রয়েছে। প্রতিবাদ করায়, তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ‘নবান্ন’-এ সে খবর যাওয়ার পরে নকশাবাড়ির ব্লকে জোরদার অভিযানের নির্দেশ এসেছে।
ইতিমধ্যে ব্লকের একাধিক লোকের নামে খাসজমির ‘দখলিসত্ত্ব’ রাখার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিন যে জমিটি দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেটি শাসক দলের এক যুব নেতার আত্মীয়ের দখলে ছিল বলে অভিযোগ। নকশালবাড়ির শাসক দলের নেতাদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, ব্লকে জমির অবৈধ কারবার কার্যত সাধারণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সেখানে দলের অনেকেই ‘জড়িত’। শুধু খাসজমি দখল নয়, বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির ভুয়ো নথিপত্র তৈরি করে দখলের চেষ্টার অভিযোগও নকশালবাড়়িতে মিলেছে।
নতুন করে ব্লকে একটি জমি জবরদখলকারীদের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন পুলিশ অফিসার, শাসক দলের অনেকের তাতে নাম রয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের দাবি। তাঁদের হেফাজতে থাকা জমির নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতা থেকে নজরদারি চলছে। ২১ জুলাই তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ পালনের পরে, জেলা এবং ব্লক থেকে বাছাই করে ‘বিতর্কিত’ নেতাদের পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “এর আগেও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জমির অবৈধ কারবারে যুক্ত ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই ব্লকেরই সহ সভাপতি গৌতম গোস্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে একই জমির মামলায়। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে গৌতম গোস্বামীকেও দলের প্রাথমিক সদস্য-সহ সব পদ থেকে অপসারণ করে বহিষ্কার করা হল।”