—প্রতীকী চিত্র।
চার মেয়ে, স্বামীকে নিয়ে সংসার নুরজাহান খাতুনের। মেয়েদের ঘরে রেখে একশো দিনের কাজে যেতেন নুরজাহান। তা দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা এবং খাবারের জোগান আসত। প্রকল্পের কাজ বন্ধের পরে, বকেয়া পারিশ্রমিকও পাননি। সঙ্কটে দিনমজুরের কাজ করতে হয়েছিল শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়ার নুরজাহান এবং তাঁর স্বামীকে। দুই মেয়ে বড় হয়েছে। বর্তমানে তারাও কাজ করছে।
সোমবার নুরজাহানের অ্যাকাউন্টে একশো দিনের কাজের টাকা ঢুকেছে। মেয়ের মোবাইলে টাকা ঢোকার মেসেজ পেয়ে নুরজাহান বলেন, ‘‘ছোটটা টাকার অভাবে টিউশনে পড়তে যায় না। অনেক দিন ওদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়নি। অবশেষে, টাকা পেলাম। এই সমস্যাগুলির সমাধান হবে।’’
নুরজাহানের মতই একশো দিনের কাজের টাকার আশায় রয়েছেন সুনতি বর্মণ, কিশোর রায়েরা। এ দিন রাত পর্যন্ত তাঁদের টাকা ঢোকেনি। সুনতির দাবি, স্বামী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। কষ্ট করে কাজ করেছেন। মাটি কাটার সময় মেপে কাজের হিসাব দিতে হয়েছে। প্রাপ্য টাকা দীর্ঘদিন বকেয়া রাখা হয়েছে। তাতে কতটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে তা ‘চেয়ারে-বসা বাবুরা’ বুঝবেন না বলে দাবি তাঁদের। সুনতি বলেন, ‘‘যাঁরাই টাকা দিন, উপকারে লাগবে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কাজে লাগবে। কিন্তু প্রথম দিকে কেন ঢোকেনি, জানি না।’’
দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার পাহাড়, সমতলে কম-বেশি এক লক্ষ ত্রিশ হাজার শ্রমিক প্রকল্পের বকেয়া টাকা পাচ্ছেন। তাতে দার্জিলিং পাহাড়ের জন্য ৭৩ লক্ষের বেশি এবং শিলিগুড়ি মহকুমার চার ব্লকের জন্য ১২ কোটির বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে। জব-কার্ডগুলির নানারকম সমস্যা ছিল। কতগুলির সঙ্গে আধার লিঙ্ক ছিল না, কয়েকটিতে আবার অ্যাকাউন্ট নম্বর বন্ধ হয়ে থাকার মতো সমস্যা ছিল। সেগুলি ঠিক করা হয়েছে। যে জব-কার্ডগুলিতে কোনও রকম ত্রুটি নেই, তাঁদের টাকা এ দিন থেকে ঢোকা শুরু হয়েছে। ত্রুটিযুক্ত কার্ডগুলির টাকা আস্তে আস্তে ঢুকবে। জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল বলেন, ‘‘বকেয়ার নাম থাকা ১.৩০ লক্ষ শ্রমিকই তাঁদের টাকা পাবেন।’’
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের অভিযোগ, ‘‘বেশিরভাগ তৃণমূল নেতাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। প্রকল্পের দুর্নীতি ঢাকতে, ভোটের আগে রাজনীতি করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘যারা শ্রমিকদের বকেয়া আটকে বঞ্চিত করেছে, মানুষ তাদের কথা শুনবেন না।’’