ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের অভিধানে আর আলাদা করে উত্তরবঙ্গ শব্দটি থাকছে না— ধূপগুড়ির মাঠে সভা থেকে জানিয়ে দিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “উত্তরবঙ্গ শব্দটিতেই আমার আপত্তি আছে। সারা রাজ্যটা পশ্চিমবঙ্গ। উত্তর-দক্ষিণ ভাগ আর নয়।”
এ ভাবেই রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন অভিষেক। বিজেপির প্রতি তাঁর বার্তা, “চ্যালেঞ্জ করছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত দিন থাকবেন, বাংলা ভাগ করতে পারবেন না।” উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে প্রশাসনিক পরিকল্পনাও যে মজুত, একই সঙ্গে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
কেন উত্তরবঙ্গ বলবেন না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যখন রাজ্যের বাইরে যান, তখন কি বলেন উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছি বা দক্ষিণবঙ্গ থেকে এসেছি? তখন তো আমরা বলি পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অথচ দেখুন, আমি জলপাইগুড়িতে সভা করব বলে ঠিক করলাম, খবর হল আমি উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছি। ঝাড়গ্রামে সভা করতে গেলে তো বলা হয় না, দক্ষিণবঙ্গ সফরে যাচ্ছি।’’ এর পরেই অভিষেক যোগ করেন, ‘‘আজ থেকে তৃণমূলের অভিধানে উত্তরবঙ্গ শব্দটা থাকবে না। যারা বাংলা ভাগ করতে চাইছে, তাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন, তত দিন পৃথক রাজ্য করে দেখাতে পারবেন না।’’ তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা মানুষের মধ্যে বিভাজন করতে চান, তাঁদের এখন থেকে চিহ্নিত করতে হবে।’’
অভিষেক বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে ধূপগুড়ির সভা থেকে বার্তা দেবেন, তা নিয়ে তৃণমূলে চর্চা চলছিল। তবে এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গ নামটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি রাজ্যের উত্তর প্রান্তের জেলাগুলির বাসিন্দাদের একটা অংশের আবেগকে ধরতে চাইলেন বলে মনে করা হচ্ছে। যে অংশটি মাঝেমধ্যে সমাজমাধ্যমে লেখে, ‘উত্তরবঙ্গ বলে আখেরে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে’। তৃণমূল সূত্রে মনে করা হচ্ছে, তাঁর এই বাংলার দুই প্রান্তকে এক করে দেখার বার্তা তাঁদের কাছে পৌঁছবে। নিজের লোকসভা নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের সঙ্গেও জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের তুলনা করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের একমাত্র প্রস্তুতি সভা আমি জলপাইগুড়ি জেলায় করলাম। এর পর প্রতি দু’মাসে আসব। এখানকার জেলাগুলিতে এতবার আসব যে আপনারা বলবেন, যান এ বার একটু নদিয়া, হাওড়াও দেখুন। আমার কাছে ডায়মন্ড হারবার যা, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারও তাই।”
বাংলা ভাগ রুখতে অভিষেক যে বার্তা দিয়েছেন, তার বিরোধিতা করতে গিয়ে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ কিন্তু কার্যত বিভাজনেরই কথা বলেছেন। শঙ্কর বলেন, “আমরা উত্তরবঙ্গবাসী হিসেবে গর্বিত। অভিষেকবাবু স্মরণে রাখবেন, বহু ভঙ্গের স্মৃতি রয়েছে বঙ্গের। বহুবার ভেঙেছে পশ্চিমবঙ্গ। স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা চলছে, তৃণমূল আমলেও চলছে। তাই হয়তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমা চাইতে এসেছিলেন। উত্তরবঙ্গ এখনও বঞ্চিত।” তৃণমূল নেতাদের একাংশের প্রশ্ন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ গড়ার যে কাহিনি বিজেপি প্রচার করে, তারাই সে রাজ্য ভঙ্গের কথা বলে নিজেদের বিরুদ্ধাচারণ করছেন না কি! শঙ্কর অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “সে প্রশ্ন না তুলে আগে উত্তরবঙ্গবাসীর মনে কেন ক্ষোভ জন্মেছে, সেটা ওঁরা খুঁজুন। ওঁরা তো মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে চাইছে।”
এ দিন অভিষেক এ-ও দাবি করেছেন, বাম আমলে কলকাতার সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলির ‘দূরত্ব’ অনেকটাই বেশি ছিল। তৃণমূল আমলে সে দূরত্ব কমেছে। এর উত্তরে এক বাম নেতার কথায় শোনা গেল, “একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, বাম আমলে কিন্তু উত্তরবঙ্গবাসীরা জোর গলায় রাজ্য ভাগের বিরোধিতাই করতেন।”