গঙ্গায় জল বাড়তে থাকায় শুক্রবার রাত থেকেই ভীমাটোলা গ্রামে ধ্বংসলীলা শুরু হয়। —নিজস্ব চিত্র।
গঙ্গার ভাঙনে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল মালদহের কালিয়াচকের গোটা ভীমাটোলা গ্রাম। শুক্রবার রাত থেকেই গঙ্গায় জল বাড়তে থাকায় ওই গ্রামে ধ্বংসলীলা শুরু হয়। শনিবার সকালের মধ্যে গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ১২৫টি পাকা বাড়ি, একটি মসজিদ-সহ বহু এলাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত গঙ্গার ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ করেনি রাজ্য বা কেন্দ্র— কোনও সরকারই। যদিও মালদহ জেলা প্রশাসনের দাবি, দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির ফলে সেখানকার গঙ্গায় জল বেড়েছে। তা মালদহে এসে পড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় এখানকার গঙ্গায় প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার জল বেড়েছে। চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা এবং ফুলহার নদী। ওই দুই নদীতে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে মহানন্দা নদীতে। তবে ভাঙনের জেরে মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভীমাটোলা গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। এখনও পর্যন্ত এই গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার সর্বস্বান্ত। বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন তাঁরা। অনেকেরই দিন কাটছে খোলা আকাশের নীচে।
স্থানীয়দের দাবি, গঙ্গার ভাঙন রুখতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বদলে বালির বস্তা দিয়ে কোনও রকমে তা ঠেকানো চলছে। রঞ্জিৎ মণ্ডল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ভূতনিতে আমাদের গ্রামে বাঁধের ধারে গঙ্গার ভাঙন চলছে। ১০-১৫ মিনিটে সব শেষ। এ বার আমরা কোথায় থাকব?’’
কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের পাশাপাশি মানিকচকের ভূতনি দ্বীপের বাঁধও গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন। এলাকাবাসীদের দুর্দশায় কপালে ভাঁজ সেচ দফতরের কর্তাদেরও। যদিও প্রশাসনের দাবি, গঙ্গায় ভাঙন প্রতিরোধের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ফরাক্কা ব্যারেজ। কিন্তু সেই সংস্থাও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বালি ও মাটির বস্তা ফেলে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করছে সেচ দফতর। তবে বস্তার বাঁধে গঙ্গার বিপুল জলরাশি রোখা সম্ভব নয় বলেই এলাকাবাসীর মত। দুর্গতদের জন্য এখনও পর্যন্ত ত্রিপল বা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। ব্লক আধিকারিক এবং সেচ দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে দুর্গত এলাকায় কাজ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে। তবে গঙ্গায় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ ফরাক্কা ব্যারেজের অধীনে। ফরাক্কা ব্যারেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’