পুলিশ চলে গেলেও থাকেন বিশ্বনাথ

ট্রাফিক নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা ছড়ানোর রোখ চেপেছে তাঁর। একবেলা দোকান চালিয়ে বাকি সময় প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও দাঁড়িয়ে থাকছেন, হাত থাকছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইভ’-এর প্ল্যাকার্ড।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১২
Share:

ব্যতিক্রম: সকালে দোকানে বসে বিশ্বনাথ। নিজস্ব চিত্র

ট্রাফিক সিগন্যালের আলোর দিকে না তাকিয়েই রাস্তা পেরোতে যাচ্ছিলেন এক পথচারী। হঠাৎ তাঁর হাত টেনে ধরলেন বিশ্বনাথ। বেশ কড়া করে দু’কথা শুনিয়ে ট্রাফিক আইন মানার পরামর্শ দিলেন তাঁকে। আইন মেনে পথ চলবেন বলার পরে নিস্তার মিলল সেই ব্যক্তির। আজকাল জলপাইগুড়ি শহরের কোনও না কোনও জায়গায় চোখে পড়ছে এমনই ছবি। সৌজন্যে জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজার চত্বরের আনাজ ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ সেন।

Advertisement

ট্রাফিক নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা ছড়ানোর রোখ চেপেছে তাঁর। একবেলা দোকান চালিয়ে বাকি সময় প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও দাঁড়িয়ে থাকছেন, হাত থাকছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইভ’-এর প্ল্যাকার্ড। খালি মাথায় মোটরবাইক আরোহীদের দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন। অনুরোধ করছেন হেলমেট পড়ার। জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারে তাঁর দোকানে গেঁথে রেখেছেন পথ সচেতনতার প্ল্যাকার্ড। পরিচিতরা বলছেন, ‘‘বিশ্বনাথের মাথাটাই বিগড়েছে।’’

সেই কথা শুনে প্রবল আপত্তি জানালেন বিশ্বনাথ। বলছেন, “আমার মাথা মোটেই খারাপ হয়নি। কিন্তু লোকে যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলছে, মনে হচ্ছে ওদের সকলেরই বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে।’’ কিন্তু এভাবে দোকান বন্ধ করলে তো পসার নষ্ট হবে। স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে চলা সংসারে সমস্যা হবে। তাতে পরোয়া নেই বিশ্বনাথের। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু নিজের কথা ভেবে বাঁচলে চলবে না। বাকিদের জন্য সচেতনতার কাজ কাউকে তো করতেই হবে।’’

Advertisement

প্রতিদিন সাতটার মধ্যে জলপাইগুড়ির স্টেশন বাজারে দোকান খুলতেন বিশ্বনাথ। দুপুর পর্যন্ত দোকান করে ফের বিকেলে বসতেন। মাসখানেক ধরে বিকেলে দোকান খুলছেন না। সকালেও মাত্র কয়েক ঘণ্টা দোকানে থাকেন। কোনওদিন দোকানই খোলেন না। দোকান বন্ধ মানেই তিনি শহরের কোনও মোড়ে একা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে। ক্ষতি যে হচ্ছে তা মেনেও নিচ্ছেন তিনি। বললেন, “একটু বিক্রিবাট্টা কমেছে। তবে সংসার তো চলছে।’’

পঞ্চাশের দোরগোড়ায় পৌঁছনো বিশ্বনাথ ভারসাম্যের খেলাও দেখাতেন। মাথায় পরপর হাড়ি বসিয়ে বাইক চালাতেন। গত বছরের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে পুলিশের পদযাত্রায় তাঁকে ডেকেছিলেন জলপাইগুড়ির ওসি ট্রাফিক শান্তা শীল। মাথায় হাঁড়ি বসিয়ে বাইক চালিয়েছেন বিশ্বনাথ। পোস্ট অফিস অফিস মোড়ে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাফিক কর্মীরা থাকেন। তারপর সিগনালের আলো নিভে যায়। বিশ্বনাথ পোস্টার হাতে রাত দশটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন। বাকিরা বারণ করলেই বিশ্বনাথ বলেন, “এই তো ক’দিন। সবাই একটু সচেতন হলেই আবার মন দিয়ে দোকান করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement