বিক্ষোভ: বন্ধ দোকান শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র
কাশ্মীরের পুলওয়ামা’র জওয়ানদের স্মরণে বাজার বন্ধ রাখা নিয়ে উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়িতে। সোমবার সকালে শহরের মহাবীরস্থানে ব্যবসা বন্ধ করে মিছিল নিয়ে পাকিস্তান বিরোধিতায় নামেন একদল ব্যবসায়ী। জাতীয় পতাকা হাতে তাঁদের মিছিল, স্লোগান দেখে বহু দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় গোলমাল। নয়াবাজার, খালপাড়া, নেহরু রোডের একাংশে জোর করে দোকানপাট বন্ধ করার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।
খবর পেয়েই শিলিগুড়ি থানা থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী এলাকায় যায়। পুলিশের একাংশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কথা কাটাকাটিও হয়। পুলিশের বক্তব্য ছিল, কাউকে জোর করে দোকান বন্ধ করানো যাবে না। স্বেচ্ছায় কেউ দোকান বন্ধ করে রাখলে সমস্যা নেই। পরবর্তীতে দোকান বন্ধ করে দফায় দফায় এলাকায় মিছিল হয়। তবে দুপুর ২টোর পর থেকে আবার দোকানপাট খোলা শুরু হয়। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়।
ব্যবসায়ী এবং শাসকদলের একাংশের অভিযোগ, বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের একাংশ এই দোকানপাট বন্ধের পিছনে রয়েছে। অভিযোগ, পাকিস্তান বিরোধিতার নামে শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে তারা। পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে দাবি করা করেন তাঁরা। দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘জওয়ানদের স্মরণে আমরাও মিছিল করছি, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছি। তবে শহরকে স্বাভাবিক রেখে। বন্ধ, ধর্মঘট, অবরোধ করে মানুষের সমস্যা বাড়িয়ে কোনও প্রতিবাদ হতে পারে না।’’
শিলিগুড়ি শহরের মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নীচে মহাবীরস্থান বাজার, হাট, পুরানো বাজার রয়েছে। এর আর এক পাশেই উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নয়াবাজার খালপাড়া। এ দিন সেখানেই দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের একাংশকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও বাজারের বহু ব্যবসায়ী তাতে সামিল হননি। বিজেপি অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সেনাবাহিনী, দেশের পক্ষে। বন্ধ, ধর্মঘট তো আমরা করতে বলেনি। আমরা সেখানে যাইনি। আসলে তৃণমূলের নেতৃত্বই তো দেশের বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওরাই এ সব নিয়ে রাজনীতি করছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার রাতে দিল্লি থেকে রেল পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি রিপোর্ট সামনে আসে। তাতে বলা হয়, কাশ্মীরের ঘটনার প্রতিবাদে সারা ভারত ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন ভারতে ব্যবসা বন্ধ করতে চাইছে। তা হলে রেল পরিষেবায় সমস্যা হতে পারে। তাই রেলের আধিকারিকদেরও রাজ্য পুলিশ, বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
তার পরেই এ দিন সকালে শিলিগুড়ির একটি অংশ ব্যবসায়ীরা বন্ধ শুরু করেন। পরিস্থিতি বুঝে ময়দানে নেমে পড়ে শিলিগুড়ি মার্চেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সংগঠনের সম্পাদক গৌরীশঙ্কর গোয়েল বলেন, ‘‘জওয়ানদের প্রতি আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে আমরা কাউকে দোকান বন্ধ করতেও বলিনি। যার যে রকম মনে হবে তা করবেন।’’
সকাল থেকে দফায় দফায় মিছিল থেকে পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান উঠে। তাতে দলের স্থানীয় এবং লাগোয়া এলাকার কিছু যুবক সামিল হন। মহাবীরস্থান ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক মহাবীর জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘আমরা জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। মিছিল করেছি। কাউকেই জোর জবরদস্তি করা হয়নি। কোনও রাজনীতির বিষয় নেই।’’ বিকালে ডিসি (পূর্ব) গৌরব লাল জানান, ‘‘এলাকায় পুলিশ রয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’