চাপড়া মারির জঙ্গলের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেলো একটি গর্ভ বতি হাতি। ছবি দীপঙ্কর ঘটক
লোকো পাইলটদের জঙ্গলপথে ট্রেন চালানো নিয়ে সচেতন করার কর্মসূচি নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ট্রেন ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত ঠেকাতে রেল এবং বন দফতরের মধ্যে ‘সমন্বয়’ বৈঠকও বন্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ও চালসার মাঝে, জঙ্গলপথে ট্রেনের ধাক্কায় ফের হাতির মৃত্যুর ঘটনার পরে, এমনই নানা ‘ফাঁক’ উঠে এসেছে। ডুয়ার্সের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া গোটা রেলপথেকোথায় কোথায় হাতি আসতে পারে তা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া বা‘এলিফ্যান্ট ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ কবে চালু হবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এ দিনের দুর্ঘটনাস্থলেও সে ব্যবস্থা চালু হয়নি বলে অভিযোগ। রেল আধিকারিকেরা অবশ্য দাবি করেন, মাদারিহাট ও নাগরাকাটার মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় এই কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি ১১৪ কিলোমিটার কাজও দ্রুত শেষ করা হবে।
রেল সূত্রের খবর, ২০০৪ সালে আলিপুরদুয়ার জংশন ও শিলিগুড়ির মধ্যে মিটার গেজ লাইনের বদলে ব্রড গেজ লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়৷ বন আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, তখন থেকেই ট্রেনের সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের সংঘাতের শুরুটা হয়৷ অভিযোগ, প্রথম দিকে এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা মাঝেমধ্যেই দেখা যেত। ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুও হয়েছে প্রচুর হাতির। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় সরব হতে দেখা গিয়েছে পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে বনকর্তাদের। যার ফলস্বরূপ এ ধরনের ঘটনা রুখতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সে ব্যবস্থাগুলি কী অবস্থায় রয়েছে?
রেলেরই একাধিক সূত্রের খবর, নানা সময়ে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকো পাইলটেরা কাজে যোগ দেন। যাঁদের অনেকেই ডুয়ার্সের জঙ্গল পথে ট্রেন বা মালগাড়ি চালানোর দায়িত্বেথাকেন। কিন্তু অভিযোগ, ট্রেনের ধাক্কায় হাতি বা অন্য বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রুখতে তাদের নিয়ে ‘সেন্সিটাইজ়েশন প্রোগ্রাম’ একটা সময় শুরু হলেও, এখন তা অনিয়মিত ভাবে হয়। অনিয়মিত হয়ে পড়েছে রেল ও বন দফতরের সমন্বয় বৈঠকও।
সূত্রের দাবি, রেল ও বন দফতরের কর্তাদের মধ্যে শেষ সমন্বয় বৈঠক হয়েছিল ২০২২ সালের জুলাই মাসে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “লোকো পাইলটদের নিয়ে সেন্সিটাইজ়েশন প্রোগ্রাম কতটা গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের মনে সন্দেহ রয়েছে।” একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বলেন, “গত বছর জুলাই মাসে শেষ বার সমন্বয় বৈঠকটি আমরাই ডেকেছিলাম। তার পরে রেলের তা ডাকার কথা। আমরা তার অপেক্ষায় রয়েছি।”
বিষয়গুলো নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। ‘ন্যাফ’-এর কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “ডুয়ার্সের রেলপথে ট্রেনের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাত ঠেকাতে লোকো পাইলটদের সচেতন করতে সেন্সিটাইজ়েশন প্রোগ্রাম বা রেলের সঙ্গে বন দফতরের সমন্বয় বৈঠক নিয়মিত হচ্ছে না বলে আমদের কাছেও অভিযোগ আসছে। বিষয়টিকে সকলের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি, যে মালগাড়ির ধাক্কায় হাতিটির মৃত্যু হল, সেটির গতিবেগ, সব নির্দেশিকা মেনে চালানো হচ্ছিল কি না, তারও তদন্ত হওয়া জরুরি।”
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম অবশ্য বলেন, “বন দফতরের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় বৈঠক দ্রুত হবে। তবে একটা সময় অন্তর-অন্তর লোকো পাইলটদের ওই সচেতন-কর্মসূচি হয়।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ডুয়ার্সের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া গোটা রেল পথে হাতির যাতায়াত পথ চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চালু করতে দেরি হচ্ছে কেন? কেনই বা এ দিনের দুর্ঘটনাস্থলে সেই ব্যবস্থা চালু ছিল না? যেখানে গত বছর এপ্রিল মাসে এর ‘ট্রায়াল রান’ হয়েছিল। রেল আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ট্রায়াল রানের পরে, গত নভেম্বর মাসে এই কাজ শুরু হয়। মাদারিহাট ও নাগরাকাটার মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যে কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি ১১৪ কিলোমিটার কাজও দ্রুত শেষ হবে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।