এই ঘোড়ার সঙ্গেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে রঞ্জিত পালের নিজস্ব চিত্র
চার চাকার গাড়ি নেই। কিন্তু চার পায়ের ঘোড়া আছে। আর সেই ঘোড়াকে সঙ্গী করে অষ্টপ্রহর কাটছে রায়গঞ্জের রঞ্জিত পালের।
ছেলেবেলা থেকেই ঘোড়ার পিঠে চড়ার শখ। যা জীবনভর কাটিয়ে উঠতে পারেননি রায়গঞ্জের ৮ নম্বর বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের মহারাজপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত। বয়স বাড়তেই লেগে পড়তে হয় কাজকর্মে। হাতে একটু পয়সা জমতেই ঘোড়া কিনে আনেন তিনি। নাম দেন লাল্টু। সেই লাল্টুই এখন বছর ষাটেকের রঞ্জিতের সর্বক্ষণের সঙ্গী।
পেশায় ছোট ব্যবসায়ী রঞ্জিত। বাড়িতে খাজা, গজা-সহ নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করে লাল্টুর পিঠে চড়েই ফেরি করেন পাড়ায় পাড়ায়। আশপাশের পাঁচটা গ্রামের কচিকাঁচাদের কাছে ঘোড়ায় চড়া রঞ্জিত হয়ে উঠেছেন রূপকথার ফেরিওয়ালা। ঘোড়ায় চড়ে কেন, অন্য যানবাহন নেই? রঞ্জিতের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘গাড়ি বা বাইক কিনব যে, তার টাকা কোথায়? সাইকেলও কিনতে পারব না। আমরা যেমন দু’বেলা দু’মুঠো খাই, লাল্টুরও খাবারের যোগান দিই সে ভাবেই। ও তো আমার পরিবারেরই এক জন। ওর তেলও লাগে না। আর পরিবেশ দূষণের ভয়ও নেই। প্রায় ১১ বছর ও আমার সঙ্গে আছে। যে ক’টা দিন বাঁচি লাল্টুকে নিয়েই চলব।’’
রায় পরিবারের ৭ সদস্যদের মধ্যে এক না-মানুষ। রায় গৃহিণী রানি বললেন, ‘‘এ গরিবের ঘোড়া রোগ মানি। আগে অনেকবার বলেছিলাম লাল্টুকে বেচে দাও বা কাউকে দিয়ে দাও। কিন্তু পরে লাল্টুর উপর আমার মায়া পড়ে গিয়েছে। ও আমার সন্তানের মতই।’’
রঞ্জিত আর লাল্টুর এই রসায়ন প্রতিবেশীদের কাছে চেনা। না-মানুষ আর মানুষের নানা কর্মকাণ্ড ভাল লাগে তাঁদের। আশপাশের কচিকাঁচারাও প্রায়শই রূপকথার গল্পে শোনা তেপান্তরের মাঠ আর পক্ষীরাজের সঙ্গে মিলিয়ে নেয় হাতের কাছের লাল্টুকে। পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, যেন এই বুঝি ডানা গজাবে তার। আর লাফ দিয়ে উড়ান শুরু করবে নীল আকাশের বুকে।