—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ছোট্ট সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে সব সময়ে। কখনও হেঁশেলে চালের অভাব তো কখনও তেলের। বাড়িঘরের অবস্থাও তথৈবচ। টিনের ছাউনি দেওয়া ছোট-ছোট ঘর। নদীর ধার ঘেঁষে থাকা এই বাড়িতেই বাস হিতেন দাসদের। কোচবিহার শহরের পনেরো নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধের ধারে বাড়িটি। সদ্য ঘোষিত রাজ্য বাজেটে সরকারি প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এ অনুদান দ্বিগুণ করে দেওয়ায় খুশির হাওয়া সেই বাড়িতে। অন্য প্রকল্পের সুবিধা নিয়েও আশার আলো দেখছেন পরিবারের সদস্যেরা। তবে তার মধ্যে আক্ষেপও রয়েছে। কী রকম? সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ঠিকঠাক নিচুতলায় পৌঁছয় না বলে অভিযোগ পরিবারটির।
আক্ষেপের সে অংশটুকু বাদ দিয়ে, খুশির হাওয়া নিজেদের পালে কাড়তে ব্লকে-ব্লকে মহিলাদের নিয়ে সভার ডাক দিয়েছে মহিলা তৃণমূল। বাড়ি-বাড়ি সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথা পৌঁছতে প্রচারের পরিকল্পনাও নিয়েছে তারা। তবে লোকসভা ভোটের মুখে তৃণমূলের এই প্রচারকে বিঁধেছে বিরোধী দলগুলি।
বামেদের অবশ্য দাবি, এ সবই হচ্ছে আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে। সিপিএম তথা বাম নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমরা সামাজিক সহায়তা প্রকল্পের বিরোধী নই। কিন্তু যা হচ্ছে, তা ভোটের দিকে তাকিয়ে। সরকারের নিজস্ব আয়ের কোনও জায়গা নেই। এক, মদ আর দুই, ঋণ বাদ দিলে, কিছুই নেই এই সরকারের। যা এই রাজ্যের অবস্থা দিনে-দিনে খারাপ করছে। কর্মসংস্থানের কোনও জায়াগাও নেই। মানুষকে ভিন্ রাজ্যে কাজের খোঁজে ছুটতে হচ্ছে।’’
রাজ্য বাজেট নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেছেন, ‘‘ভেবেছিলাম, রাজ্য সরকার সিলিন্ডার প্রতি কিছু টাকা কমিয়ে দেবে। যেটা রাজস্থানে হচ্ছে। রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঠিক তথ্যই তো হাতে নেই। তাঁদের নিয়ে কল্পনায় প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সিভিক পুলিশদের হাজার টাকায় সংসার চলে যাবে তো?’’ তাঁর অভিযোগ, সিভিক পুলিশদের মতো শিক্ষিত বেকারদের চাকরির সুনির্দিষ্ট দিশা রাজ্য বাজেটে নেই।
এই বিষয়ে মালদহ জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি ইশা খান চৌধুরী বলেন, “সব রাজ্যেই সরকারি প্রকল্প রয়েছে। রাজস্থানেও সরকারি প্রকল্প আছে। সাধারণ মানুষকে ভাতা দেওয়ার থেকেও বেশি করে কর্মসংস্থানমুখী করা জরুরি। মানুষের হাতে কাজ থাকলেই অর্থনীতি বদলাবে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার, কর্মসংস্থানে দুই সরকারই পিছিয়ে রয়েছে।”
বাম-বিজেপির এই সমালোচনাকে অবশ্য একেবারেই কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর বক্তব্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে মানুষের হাতে টাকা থাকার উপরে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তা বাজারে ঘুরবে। কৃষক ফসলের দাম পাবে, ব্যবসা বাড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘নানা আর্থিক সমস্যার মধ্যেও মানুষের কথা ভেবে বাজেট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন তো প্ৰত্যেক বছরই থাকবে। তাতে তো মানুষের উন্নয়ন আটকে থাকবে না। আর বামেদের সময়ে তো লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প ছিল না। তার পরেও ওঁরা এক লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছিলেন। বিজেপি তো বছরে দুই কোটি চাকরির আশ্বাস দিয়ে উধাও হয়ে যায়। তাই ওদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই।’’