ভাঙচুর: চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুর রোগীর পরিজনদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
শনিবার রাতে এক শিশুর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার রেশ ধরে নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালাল উত্তেজিত জনতা। রবিবার সকালে মাটিগাড়ার ঘটনা। এ দিন শতাধিক বাসিন্দা মাটিগাড়া থানার পুলিশের সামনেই উত্তরায়ণ উপনগরীর ওই নার্সিংহোমে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামে কমব্যাট ফোর্স ও মহিলা র্যাফ। নার্সিংহোমের অভিযোগ, ঝামেলার বিষয়ে আগে থেকে মাটিগাড়া পুলিশকে জানান হলেও পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। ভাঙচুর সমর্থন না করলেও হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল নেতারা। চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
মৃত শিশুর নাম শ্রেয়ান মণ্ডল (৫)। গত বৃহস্পতিবার নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। বাতাসিতে বাড়ির সামনে খেলার সময় ট্রাক্টরের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিল খড়িবাড়ি ব্লকের রানিগঞ্জ-পানিশালি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ভবতোষ মণ্ডলের ছেলে শ্রেয়ান। প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মাটিগাড়ার ওই উপনগরীর নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাকে। ভবতোষ বলেন, ‘‘ছেলের চিকিৎসা নিয়ে প্রথম থেকেই আমাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। বলা হয়েছিল, মাথায় রক্তক্ষরণ রয়েছে। ওষুধ দিয়ে সেরে যাবে। সেই চিকিৎসাই হয়নি। শনিবার রাতেও চিকিৎসকরা জানান, ঠিক আছে। ওই রাতেই সে কী ভাবে মারা গেল?’’ পরিবারের দাবি, তাঁদের না জানিয়ে শ্রেয়ানের চিকিৎসক বদল করা হয়েছে। একজন চিকিৎসক ছটপুজোর ছুটিতে চলে যান। সেটা পরিবারকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। বাড়ির লোকেদের দাবি, ঠিক কী চিকিৎসা হয়েছে, তার কোনও নথি এ দিন সকালে দেহ ছাড়ার সময় দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
যদিও অভিযোগ মানতে চায়নি নার্সিংহোম। নার্সিংহোমের ক্লিনিক্যাল বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সঞ্জীব সরকার বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় বাচ্চাটির খুলির একাধিক জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল। ব্রেনও ফুলে গিয়েছিল বলে অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। শিশুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বার বার বলা হয়েছে পরিবারকে।’’
শ্রেয়ানের মৃত্যুতে এ দিন সকাল থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন পড়শি ও আত্মীয়রা। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ খড়িবাড়ির ওই এলাকার শতাধিক বাসিন্দা নার্সিংহোমে আসেন। রিসেপশনের দরজা, কম্পিউটার, ফোন, টিভি ভেঙে দেওয়া হয়। উল্টে দেওয়া হয় চেয়ার। এই ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় নার্সিংহোমে। পালিয়ে যান কর্মী এবং অন্য রোগীর পরিবারের সদস্যরা। যে সময় ভাঙচুর হয়েছে তখন সেখানে মাটিগাড়া থানার পুলিশ ছিল। পরে বাড়তি বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন শহরের দুই ডিসি, বাগডোগরা ও প্রধাননগর থানার অফিসারেরা। নার্সিংহোমের জেনারেল ম্যানেজার কৌশিক হালদার বলেন, ‘‘সকালেই মাটিগাড়া থানার পুলিশকে জানানো হয়েছিল। আমাদের কর্মীরা ব্যাপক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আইনি ব্যবস্থা নেব।’’
গোলমালের সময় তৃণমূলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার এবং যুবনেতা বিকাশ সরকাররা গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। রঞ্জন বলেন, ‘‘জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ভাঙচুর সমর্থনযোগ্য নয়। শিশুটির এতটা খারাপ পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষ আগে থেকে বললে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙত না।’’
ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা করেছে রাজ্যে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ডব্লিউবিডিএফ। সংগঠনের পক্ষে অর্জুন দাশগুপ্ত এবং কৌশিক চাকি এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে। রাজ্যে চিকিৎসকরা যাতে ভয়মুক্ত হয়ে পরিষেবা দিতে পারে তা প্রশাসনকে দেখতে হবে বলে দাবি করেন তাঁরা।