শাহিদুল। —নিজস্ব চিত্র।
বাবা মারা গিয়েছেন ছোটবেলাতেই। বড় দুই ভাইয়ের হাতে সংসারের ভার। কিন্তু অভাবের সংসারে তাঁদের সাহায্য করার কথা ভেবে মাধ্যমিক পরীক্ষার চার মাস আগে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন কোচবিহারের সুটকাবাড়ির শহিদুল হক। তবে দু’মাস পরে, পরীক্ষার টানে ফের গ্রামে ফেরেন তিনি। শুক্রবার কোচবিহার ঘুঘুমারি হাইস্কুলে বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরে, আঠারো বছরের শহিদুল বলেন, ‘‘পড়ার খুব ইচ্ছে আছে। সে জন্যেই বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু সেই সঙ্গে রোজগারও দরকার। তার পরেও ভাল করে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব। যাতে অন্তত কলেজ পর্যন্ত যেতে পারি।’’
সুটকাবাড়ি কালীগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্র শহিদুল। ওই স্কুল থেকে এ বার ১২১ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই দরিদ্র পরিবারের। অনেকের বাবা-মা পরিযায়ী শ্রমিক। শহিদুলরা তিন ভাই, এক বোন। আর্থিক অনটনের জন্যই শহিদুলের বড় দুই ভাই বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তাঁরা দু’জনেই গাড়ি চালক। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শহিদুল নিজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনটন। ফলে, এক সময়ে বাধ্য হয়েই কাজ নিয়ে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেন তিনি। শহিদুল জানান, বেঙ্গালুরুতে কাজে গেলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জেদ ছিল তাঁর মনে। সেখানে কাজ শেষে, রাত জেগে বই নিয়েবসতেন তিনি। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বাড়ি ফিরে জোরকদমে পড়াশোনা শুরু করেন। শহিদুল বলে, ‘‘যে কোনও কাজেই পড়াশোনা প্রয়োজন। সে জন্যেই পড়াশোনা করতে চাই।’’
কালীগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গোপাল বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে অনক দরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছে। যারা নিজেরা কাজ করার ফাঁকে পড়াশোনা করে। আমরা তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করি। অনেক সময় উপস্থিতির হার কম থাকার জন্য সমস্যা হয়। সেখানেও আমরা কড়া সিদ্ধান্ত নেই না।’’ কালীগঞ্জ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামল বর্মণের আশ্বাস, ‘‘শহিদুল-সহ আমরা প্ৰত্যেক দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকব। যাতে তাঁরা পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, সরকারি অনেক প্রকল্প আছে, সেই সব সুবিধা যাতে পায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।’’
ঘুঘুমারি হাইস্কুলে ছিল শহিদুলের পরীক্ষা কেন্দ্র। ওই স্কুলের শিক্ষক নীহাররঞ্জন দাস বলেন, ‘‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও শহিদুলের মতো ছেলে পড়াশোনা করতে চাইছে। এটা বড় বিষয়। আমরা পাশে আছি।’’