গত বছর এ ভাবেই সান্তা সেজে ঘুরেছেন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
তাঁর হাতে যেন আর সময় নেই। ঘরের ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে সান্তাক্লজ়ের পোশাক। টেবিলে চকলেট, খেলনা। এক দিন আগে কেকও পৌঁছে যাবে ঘরে। ২৫ ডিসেম্বর সকালে তিনি ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন। তাঁর অপেক্ষায় থাকা শিশুরা চিৎকার করে ছুটবে, “ওই তো সান্তাক্লজ, ওই তো সান্তাক্লজ়।” ব্যস্ত হয়ে পড়বেন তিনিও। ঝুলি থেকে এক এক করে চকলেট, কেক উপহার হিসেবে তুলে দেবেন শিশুদের হাতে। আর বলবেন, “এর পরে বড় হবে তোমরা। কখনও ভেদাভেদ করবে না। একজন মানুষকে মানুষের চোখেই দেখবে।” আবারও বলবেন, “এ বার ওমিক্রনের কথা শোনা যাচ্ছে। সবাই সতর্ক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।” এক দলের মনে খুশি ছড়িয়ে অন্য জায়গায় অপেক্ষায় থাকা খুদের ঝাঁকের দিকে এগিয়ে যাবেন তিনি।
তিনি কোচবিহারের ব্যবসায়ী উত্তম কুন্ডু। ষাটের কাছাকাছি বয়স উত্তমের। কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ির বাসিন্দা উত্তমের জামাকাপড়ের দোকান রয়েছে ভবানীগঞ্জ বাজারে। তিনি বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। উত্তম জানান, যুবক বয়সে ছোটদের আনন্দ দেওয়ার শখ ছিল তাঁর। মাঝে মাঝেই ছোটদের নিয়ে মেতে উঠতেন। এর পরেই মাথায় সান্তাক্লজ় সেজে বেরোনোর বিষয়টি আসে। ২০০০ সালে প্রথম সান্তাক্লজ় সেজে বেড়িয়ে পড়েন তিনি। এর পর থেকে ২৫ ডিসেম্বর তাঁর কাছে অন্য রকম একটি দিন হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “ওই দিনটি আমাকে খুব টানে। ওই দিন আমি শুধু শিশুদের কথা ভাবি। তাঁদের নিয়ে দিনভর
কাটিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়।” এ বার তিনি একটি সুসজ্জিত গাড়ি নিয়ে বেরোবেন। যাতে মাইক বাঁধা থাকবে। তা থেকে সচেতনার বার্তা দেবেন তিনি। এ ছাড়াও গাড়ির সামনে বেশ কিছু ব্যানার,
প্ল্যাকার্ড থাকবে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুতে তাঁর একটি সাইকেল ছিল। সেই সাইকেল নিয়েই তিনি দিনভর ছুটতেন। এর পরে বাইক কিনে নেন। সেই বাইক নিয়েও বেশ কয়েক বছর সান্তাক্লজ সেজে শহরের
অলিগলি ঘুরেছেন তিনি। এখন একটি ছোট চার চাকার গাড়ি ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়েন। ওই কাজে স্বামীর পাশে দাঁড়ান উত্তমের স্ত্রী রিঙ্কু কুন্ডু। সবাই মিলে টাকা জমিয়ে রাখেন বছরভর। সেই টাকায় কেনা হয় উপহার সামগ্রী। উত্তম বলেন, “সবাই মিলে ভাল থাকব। আনন্দে থাকব। এটাই একমাত্র চাওয়া। সে জন্যেই সচেতনতার বার্তা নিয়ে শিশুদের কাছে যাই। এই শিশুরাই তো আগামীর ভবিষ্যৎ।”