ফাইল চিত্র।
স্কুল বন্ধ। তবুও সকালে উঠে নিজের পড়াশোনা আছে। তার পরেই ছুট ত্রাণ শিবিরে। কেউ আনাজ কাটছে, কেউ খাবার প্যাকেটে গোছাচ্ছে। কোচবিহারে সপ্তম শ্রেণির মানসী, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রগতি বর্মণরা কোভিড লড়াইয়ে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওঁদের কথায়, এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো খুব প্রয়োজন। তাই ওরা যতটুকু পারছে চেষ্টা করছে। প্রগতির কথায়, ‘‘পরীক্ষা না হওয়ার কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছে। অনেক কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এর মধ্যে একটু ভাল লাগে এই কাজগুলো করতে।’’ ওঁদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বুদ্ধদেব রায়। তিনিও গরিব পরিবারের ছেলে। শহরের একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন। একটি টোটো নিয়ে ৭০ জনের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সবাই মিলে যদি গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে থাকি, তাহলে অনেকেই ভাল থাকবে।’’
কোচবিহার শহরের কাছে খাগরাবাড়িতে একটি কমিউনিটি কিচেন চালু হয়েছে। শহর ও গ্রামের বহু মানুষ একসঙ্গে ওই কিচেন পরিচালনা করছেন। আঠেরো দিন ধরে ওই কিচেন চলছে। সকাল-বিকেল দু’বেলা সেখানে রান্না হয়। এর পরেই দুপুর ও রাতের খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়ি বাড়ি। দিনমজুর, শ্রমিক থেকে শুরু করে কোনও পরিবার কোভিড আক্রান্ত হয়ে সমস্যায় পড়লে তাঁদের বাড়িতেও খাবার পৌঁছে যায়। সেই রান্নাঘরেই এখন মানসী, প্রগতি, বুদ্ধদেবদের কর্মযজ্ঞ চলছে। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, মাথা ঢেকে বসে পড়ে তাঁরা। মানসী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। একের পর এক খাবার প্যাকেট করে যাচ্ছে সে। সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে আনাজ কাটতেও বসে পড়ে সে। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই শিখেছি বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। বহু মানুষ কষ্টে রয়েছেন। সেই কষ্ট দূর করতে যে কোনওভাবেই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই। তাই কিচেনে আসি।’’
প্রগতিদের বাড়ি দেবীবাড়ি এলাকায়। সে সুনীতি অ্যাকাডেমি হাইস্কুলের ছাত্রী। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছে সে। নেট নিয়ে অনেকবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। তার পরেও হাল ছাড়েনি। প্রগতি বলল, ‘‘এখন তো পড়ার চাপ নেই। ভাবছি অনেক গরিব ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য খাতা, পেন নেই, তাঁদের কোনওভাবে সাহায্য করার জন্য।’’
বুদ্ধদেবের বাড়ি হলদিবাড়িতে। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘কষ্ট কী তা আমরা জানি, তাই তো অন্যের কষ্টে পাশে থাকতে চাই।’’