অনাবিল: পুজোয় হাতে নতুন পোশাক। শনিবার মালদহে। —নিজস্ব চিত্র।
ওরা কেউ পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে, কেউ অষ্টমে। কেউ তফসিলি জাতি, কেউ আদিবাসী জনজাতি। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা এই পড়ুয়াদের অনেকেরই জোটেনি পুজোর নতুন জামা। তাদের পাশে এসে দাঁড়াল এ বারে তাদেরই বেশ কয়েক জন সহপাঠী, মালদহের সরকারি শুক্রবারি হাই মাদ্রাসার বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী। টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে চন্দন মুর্মু, সুইটি রজক, সোনাকা মণ্ডলদের হাতে সপ্তমীর দিন নতুন কাপড় তুলে দিল ওই মাদ্রাসায় তাদেরই সহপাঠীরা।
শুধু ছোটদের হাতেই নয়, মাদ্রাসার শিশু সংসদ, ‘মিনা মঞ্চ’ ও ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর সদস্যেরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদের হাতেও নতুন জামা, লুঙ্গি, ধুতি, শাড়ি তুলে দেয়। সঙ্গে ছিলেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ওবায়দুর রহমান, ‘মিনা মঞ্চ’ ও ‘শিশু সংসদ’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল লাহিল মোমিন-সহ অন্যেরা। প্রধান শিক্ষক ওবায়দুর বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসায় তফসিলি জাতি ও আদিবাসী জনজাতির যে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করে, তাদের অধিকাংশই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। পুজোয় অনেকেরই জামাকাপড় হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে সেই সমস্ত পড়ুয়া ও তাদের পরিবারের হাতে এ দিন পুজোর জামা-কাপড় তুলে দিয়েছে। আগামী সময়েও এই ধরনের কাজে আমরা উদ্যোগী হব।’’
‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর সদস্য অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া নাসিম বানু বলে, ‘‘আমাদের সহপাঠীদের অনেকেই পুজোর পোশাক কিনতে পারে না। তাই আমরা আগে থেকে ঠিক করেছিলাম, যে টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে ওদের এবং ওদের বাড়ির লোকেদের পুজোর সময় নতুন পোশাক দেব। এ দিন সেটাই করেছি।’’
মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুইটি রজকের মা মালতী বলেন, ‘‘করোনার পর থেকে সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে রয়েছে। কেউই পুজোর জামাকাপড় কিনতে পারিনি। মেয়ের মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা এসে এ দিন আমাদের নতুন জামা কাপড় দিয়ে গেলেন। বড় ভাল লাগল।’’ আর এক ছাত্র চন্দন মুর্মু বলে, ‘‘বাবা ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। পুজোর জামাকাপড় হয়নি। মাদ্রাসা থেকে এ দিন আমাকে ও আমার মাকে নতুন পোশাক দিয়েছে।’’ আদিবাসী সংগঠনের নেতা চুনিয়া মুর্মু বলেন, ‘‘মাদ্রাসার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই।’’