—প্রতীকী চিত্র।
সন্তানহারা এক দম্পতির ইচ্ছে ছিল একটি মেয়ে, যে ‘মা’ বলে ডাকবে, ‘বাবা’ ডাকতে পারবে। কারণ, হঠাৎই একটি দুর্ঘটনা তাঁদের জীবন থেকে সে ডাক কেড়ে নিয়েছিল। একটি বড় মেয়েকে দত্তক নিতে চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। জলপাইগুড়ির হোমে ছিল ১৫ বছরের একটি মেয়ে। যে মা-বাবা, বাডির ঠিকানা কিছুই বলতে পারেনি। ঠিকানা খুঁজে কেটে গিয়েছে আট বছর। সেই দম্পতির ছবি দেখানো হয় মেয়েটিকে। জানতে চাওয়া হয়, ‘‘মা-বাবা ডাকবে ওঁদের?” রাজি হয় মেয়েটি। গত ছ’মাস ধরে মেয়েটি ছিল দম্পতির কাছে। শুক্রবার তাঁদের ডেকে পাঠায় জেলা প্রশাসন। দম্পতি, মেয়েটি, জেলা শিশুকল্যাণ দফতর সকলের বক্তব্য শুনে রিপোর্ট দেখে সরকারি ভাবে দত্তক দেওয়া হয় মেয়েটিকে। মেয়েটি এখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। প্রশাসনের দাবি, ১৫ বছর বয়সী কোনও মেয়েকে দত্তক দেওয়া বিরল এবং জলপাইগুড়ি জেলায় এই প্রথম।
সাধারণত পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের দত্তক দেওয়া হয়, এটাই প্রথা। গত বছর থেকে নতুন সরকারি নিয়মে, পাঁচ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সীদের দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাকে দত্তক দেওয়া হবে, তার সম্মতি বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রেও মেয়েটি রাজি হয়। এ দিন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিককে মেয়েটি বলে, “আমার ছোটবেলার কোনও কথাই মনে নেই, এখন যাদের মা-বাবা বলে ডাকছি, তাঁরাই আমার মা-বাবা। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যান, নতুন স্কুলে ভর্তি করেছেন।” ২০১৩ সালে মেয়েটি জলপাইগুড়ির হোমে এসেছে। হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, “ও হারিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আনে। কিছুতেই বাড়ির কথা মনে করতে পারত না। আমরা ভাবতাম, যদি ও একটা বাড়ি পেত।”
দম্পতির এক জন বলেন, “মনে হত, এই বুঝি আমাকে বাবা ডাকছে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেতাম না। আমরা চেয়েছিলাম, সেই শূন্যতা ভরিয়ে দিক আমাদের
আগের সন্তানেরই বয়সের কেউ। ও ওর মতো করে বড় হোক, আমরা আছি ওর জন্য।”
শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসক শমা পারভীনের উপস্থিতিতে দত্তক দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক তেজস্বী রাণা বলেন, “এমন ঘটনা বিরল। অনেকেই শিশু দত্তক নিতে চান। শিশুরা বড় হলে, হোম থেকে অন্য কোনও পরিবারে যেতে চায় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। দম্পতি মেয়েটিকে নিজের মেয়ের জায়গায় বসিয়েছেন। মেয়েটিও যেন হারিয়ে যাওয়া মা-বাবাকে খুঁজে পেয়েছে। দত্তক দেওয়ার আগে, সবই বিবেচনা করে দেখা হয়েছে।”