Jaldapara

নব্বইয়ে বিদায় মধুবালার

মধুবালাকে নিয়ে জলদাপাড়া জঙ্গলের আনাচে-কানাচে কত স্মৃতি, কাহিনিই না শোনা যায়!

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৬:৫৭
Share:

মৃত্যু: জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ময়রাডাঙায় রাখা হয়েছে বৃদ্ধ হাতি মধুবালার মৃতদেহ।রবিবার। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

একদিকে অত্যন্ত শান্ত। অন্যদিকে প্রবল সাহসী। দুই চরিত্রের মিশেলে জঙ্গলের ভিতরে যে কোনও অভিযানে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। রবিবার জলদাপাড়ার জাতীয় উদ্যানে নব্বই বছর বয়সি হাতি, মধুবালার মৃত্যুতে সে সবই অতীত হয়ে গেল। রবিবার জলদাপাড়া জঙ্গলের ময়রাডাঙায় দুপুরে মৃত্যু হয়েছে মধুবালার।

Advertisement

মধুবালাকে নিয়ে জলদাপাড়া জঙ্গলের আনাচে-কানাচে কত স্মৃতি, কাহিনিই না শোনা যায়! তাই মধুবালার মৃত্যুতে বন দফতরের শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কর্মীরা সকলেই শোকস্তব্ধ।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবীণ কুনকি হাতিদের মধ্যে অন্যতম ছিল মধুবালা। ১৯৩০ সালে বিহারের শোনপুরে তার জন্ম। তারও ৩৯-৪০ বছর পর, গত শতকের ষাটের দশকের শেষে তাকে কিনে নেয় বন দফতর। তারপর নিয়ে আসা হয় জলদাপাড়ার জঙ্গলে। তখন থেকেই বন দফতরের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে জঙ্গলের অন্যতম প্রহরী ছিল সে। মিষ্টি স্বভাবের জন্যই তার নাম মধুবালা।

Advertisement

সপ্তাহখানেক আগে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত, সেই দায়িত্ব পালন করে যায় মধুবালা।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পঞ্চাশ বছর ধরে জলদাপাড়ায় বন দফতরের প্রতিটি বড় অভিযানে বন কর্মীদের সঙ্গে ছিল মধুবালা। তার আটটি সন্তান রয়েছে। মধুবালার পরবর্তী তিন প্রজন্ম জলদাপাড়াতেই কর্মরত। কিন্তু দিন কয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে হাতিটি। তার আগে পর্যন্ত জলদাপাড়ায় প্রতিটি অভিযানে বের হওয়া কুনকি হাতিদের মধ্যে নেতৃত্ব দিত মধুবালাই।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, “অনেক বছর আগে জলদাপাড়ার জঙ্গলে কাজ করার সময় মধুবালাকে কাছ থেকে দেখেছিলাম। ও খুব শান্ত আর প্রচণ্ড সাহসী ছিল। সে জন্যই বড় কোনও অভিযানে আমাদের সঙ্গে ওর থাকাটা আবশ্যিক হয়ে উঠেছিল।“

জলদাপাড়ার বনাধিকারিকরা জানিয়েছেন, জঙ্গলের ভিতরে এমন অনেক অভিযানে দেখা গিয়েছে, সামনে গন্ডার বা অন্য কোন বন্যপ্রাণীকে দেখে ভয়ে কোনও কুনকি হাতি পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মধুবালার ক্ষেত্রে তা কখনও হয়নি। জঙ্গলের কোন বন্যপ্রাণীই তাকে কখনও টলাতে পারেনি। ফলে, যে কোনও অভিযানেই তাকে সঙ্গে রাখার চাহিদা বাড়তেই থাকে।

জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “এত বড় একটা জঙ্গলের সংরক্ষণে মধুবালারও যথেষ্ট কৃতিত্ব রয়েছে। আমরা ওর কাছে ঋণী।’’

বন দফতর সূত্রের খবর, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের এমন কোনও বিট নেই যেখানে মধুবালা কাজ করেনি। শান্ত ও সাহসী স্বভাবের জন্যই তাকে সামনে রেখে অন্য কুনকি হাতিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। নিজের আটটি সন্তানকে পালনের সঙ্গে জলদাপাড়ার বেশ কয়েকটি মা-হারা হস্তিশাবককেও বড় করে তোলার পিছনে মধুবালার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই শূন্যস্থান কে পূরণ করবে সেটাই এখন বন কর্তাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement