ভোরে: তোলা হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি। নিজস্ব চিত্র
মাত্র ক’দিন আগেই মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে খালে বাস উল্টে ৪২ জনের মৃত্যু হয়। তারপরেও চালকদের হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ উঠল বুধবার। এ দিন ভোরে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে একটি বেসরকারি বাস উল্টে যায় নয়ানজুলিতে। ৪০ জন যাত্রী জখম হয়েছেন। নবদ্বীপ থেকে ওই বেসরকারি বাসটি কোচবিহার যাচ্ছিল। চালক পলাতক।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসটি খুবই জোরে যাচ্ছিল। বারণ করা সত্ত্বেও চালক শোনেননি বলে অভিযোগ। তার উপরে যে এলাকায় বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেই এলাকায় একটি বাঁক রয়েছে। ঘন কুয়াশার জেরে চালক ওই বাঁক দেখতে পাননি বলে অনেকে মনে করছেন। করণদিঘি থানার তিতপুকুর জাতীয় সড়কের উপরে ওই এলাকাতে কেন পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি নেই, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আহতদের করণদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে এবং রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহত বাসযাত্রীরা জানান, বেশিরভাগই ভোরে ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকা শব্দ শুনে দেখেন, একটি গর্তের মধ্যে সকলে ঝুলছেন। এক যাত্রী বলেন, ‘‘কোনও মতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি।’’
করণদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে বেডে শুয়ে জখম কোচবিহারের বাসিন্দা মৌসুমী দাস বলেন, “রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। কিভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা বুঝতে পারছিনা। আচমকা শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি সিট থেকে মেঝেতে শুয়ে পড়ে রয়েছি। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। দেখছি তত ক্ষণে বাস ঝুলছে।’’ কোচবিহারেরই বাসিন্দা মুক্তি বিশ্বাস নামে আর এক যাত্রীর কথায়, ‘‘গতি এত না থাকলে হয়তো দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।’’ অন্য আরও এক জখম যাত্রী শিলিগুড়ির সোফিয়া খাতুন বলেন, ‘‘চালকের কানে মোবাইল ছিল না ঠিকই। কিন্ত চালক এত দ্রুত গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন যে ভয় করছিল।’’
নয়ানজুলি থেকে বাসটিকে উদ্বার করতে অনেক সময় লেগে যায়। দীর্ঘক্ষণ একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। হাসপাতাল সুত্রে জানা গিয়েছে, করণদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি আহতদের মধ্যে বেশিরভাগকেই প্রাথমিক চিকিৎসা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে সরকারের এত প্রচারের পরও গাড়ি চালকরা যে সচেতন হননি, তারই প্রমাণ মিলল এদিন। উদ্বেগে প্রশাসনও। প্রশাসনের বক্তব্য, দুর্ঘটনা আরও মারাত্নক আকার নিতে পারত।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্র্যাফিক পুলিশ রাতে চালকদের জল খাওয়ায়। পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনা রুখতে গতি মাপার জন্য জাতীয় সড়কে বসানো হয়েছে স্পিড লেজার গান। কেউ মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কি না, জানতে চালকদের ব্রেথ অ্যানাইলাজার মেশিন দিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না, উঠছে সেই প্রশ্ন।