ঘটনাস্থলে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। — বিশ্বরূপ বসাক
একই রাতে শিলিগুড়ি শহরে একাধিক চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শিলিগুড়ি থানার পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির হিলকার্ট রোডের ক্ষুদিরামপল্লিতে পরপর তিনটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই একই থানার খালপাড়া ফাঁড়ির বর্ধমান রোডের একটি বাইকের শোরুমে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মালিকের দাবি অনুসারে বাইকের শোরুমের পিছনের অংশের দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকে আলমারি ভেঙে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা চুরি হয়েছে। শোরুমের সিসিটিভি ফুটেজে দুই দুষ্কৃতীকে আধঘন্টার বেশি সময় ধরে ‘অপারেশন’ চালাতেও দেখা গিয়েছে। তেমনিই, হিলকার্ট রোডের বই, ওষুধ এবং সংবাদপত্র সরবরাহকারী সংস্থার দফতরে টিনের চাল কেটে দুষ্কৃতীরে ঢুকে নগদ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২৬ গাজার টাকার বেবি ফুড নিয়ে পালিয়েছে।
পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও রাত অবধি ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রাতে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা নিজেই বাইকের শোরুমেও যান। পুলিশ অফিসারদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা শহরের বাসিন্দা গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘সত্যিই উদ্বেগজনক ঘটনা। পুলিশকে শহরের নজরদারি বাড়াতে হবে। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলছি।’’
এই অবস্থায় শহরের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। মেয়র বলেন, ‘‘শহরের হচ্ছে টা কী! তরুণী নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। পরপর দোকান ভেঙে চুরি হচ্ছে। পুলিশ কি করছে জানি না। এর পরে ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা রাতে আতঙ্কে ঘুমোতে পারবেন না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, বাইকের শো-রুমের পিছনে দিকে ওয়ার্কশপ দেওয়াল দিয়ে দুষ্কৃতীরা শো-রুমে ভিতরে ঢোকে। তার পরে একটি দেওয়াল ভেঙে দফতরের মধ্যে ঢোকে। তার পরে ওয়ার্কশপের যন্ত্রপাতি দিয়েই আলমারি ভাঙে। সেখানেই টাকা রাখা ছিল। শো-রুমের ম্যানেজার সুশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্যাশিয়ারের ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় তিনি না আসায় ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েনি। তাই ৪৬ লক্ষ টাকা মতো ছিল।’’
পাশাপাশি, ঘটনার পর এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, মাস পাঁচেক আগে হিলকার্ট রোডের হাসমিচক এলাকায় পরপর কয়েকটি মোবাইলে দোকানের একইভাবে চাল কেটে চুরি হয়েছিল। তার পরে পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। কয়েকজন ধরাও পড়ে। কিন্তু পুজোর মরসুমে ফের চুরির ঘটনা শুরু হল। পুলিশ এখনও সক্রিয় না হলে ফের এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। রাত থেকে ভোর অবধি নজরদারি ভ্যানগুলি অলিগলিতেও ঘোরা দরকার। ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী এলাকাগুলি নজরদারি বাড়াতে থানাকে বলেছি।’’
হিলকার্ট রোডের ক্ষুদিরামপল্লিতে প্রতিটি দোকানে একই কায়দার দুষ্কৃতীরা ঢুকেছে। পুরানো টিনের চাল সমান করে কোনও যন্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে। তার পরে দোকানগুলির ভিতরে থাকা ‘ফলস সিলিং’ ভেঙে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢোকে। তবে প্রতিটি চালের যতটুকু অংশ টাকা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে দলটিতে ছোট ছেলে বা কিশোর রয়েছে। তাকেই ভিতরে ঢুকিয়ে জিনিসপত্র বার করা হয়েছে। এদিন ভোরে সংবাদপত্র সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ ঘোষ দোকান খুলতে বিষয়টি টের পান।
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘দোকানের একেবারে পিছনের অংশে চাল কাটা ছিল। ক্যাশবাক্সে হাজার ১০ টাকা ছিল।’’
সকালের পর পাশের ওষুধের দোকান এবং বইয়ের দোকান খুলতেই মালিকেরা একই জিনিস দেখেন। ওষুধের দোকানের মালিক কামনা সরকার জানান, দোকান খুলে তাঁর মাথা ঘুরে যায়। ক্যাশবাক্স ভাঙা। তাতে রাখা ১৬ হাজার টাকা নেই। ২৬ হাজার মতো ফুডের প্যাকেট চুরি গিয়েছে। কী ভাবে দোকানে এসেই পরিস্থিতি দেখেন বইয়ের দোকানের মালিক তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হরিসাধন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘গত দুইদিনের বই বিক্রির ১০ হাজার টাকা ছিল। সে সব গিয়েছে। পরপর চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ভয় পাবেনই।’’
সকালেই ঘটনাস্থলে যান এলাকার কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী দেবীর স্বামী নান্টু পাল। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়।’’ ব্যবসায়ীদের তরফেও ঘটনার পর পুলিশের কাছে নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সনৎ ভৌমিক।