প্রতীকী ছবি।
তীব্র গতিতে চলা স্করপিও গাড়ির সঙ্গে যাত্রী বোঝাই অটোর সংঘর্ষে মৃত্যু হল ৬ জনের। আহত ৯ জনকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ সুতির ধলার মোড়ের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে।
মৃতদের মধ্যে রয়েছে স্করপিও গাড়ির চালক আজফারুল শেখ (২৮) ও তাঁর বন্ধু ফিরোজ শেখ (২৮)। দুজনেরই বাড়ি সুতি থানার মধুপুর গ্রামে। অন্য ৪জন অটোর যাত্রী নিখিল মণ্ডল (৩৮), নিবারণ মণ্ডল (৬০), সুবোধ মণ্ডল (৬০) ও জনার্দন মণ্ডল (৬০)। তাঁদের সকলেরই বাড়ি মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর গ্রামে। অটোটিও সেখানকারই। আহত অটোর চালক সহ ৯ জনও ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। তাঁরা সকলেই জঙ্গিপুরের সীমান্ত গ্রাম চর পিরোজপুর ও চর বাজিতপুরে কলাই ও মটর কাটার জন্য শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন। উত্তরবঙ্গগামী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেন হয়েছে তাই নয়, বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত রাস্তা ঝা চকচকে। ফলে বেশির ভাগ গাড়িই চলে তীব্র গতিতে। ওই স্করপিও গাড়িটি সুতির এক ইটভাটা মালিকের। এদিন মালিকের ছেলেকে উমরপুরের একটি বেসরকারি স্কুল থেকে আনার জন্য গাড়িটি যাচ্ছিল। একসঙ্গে যাবে বলেই গ্রামের বন্ধু ফিরোজকে গাড়িতে তুলে নেন চালক। সাজুর মোড় থেকে তীব্র গতিতে যাচ্ছিল গাড়িটি উমরপুরের দিকে। ধলার মোড়ের কাছে ছুটন্ত গাড়ির সামনের চাকা ফেটে যেতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাঝেই ডিভাইডার টপকে গাড়ি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে অন্য লেনের ফরাক্কাগামী যাত্রী বোঝাই অটোতে। ভেঙেচুড়ে গিয়ে চারিদিকে ছিটকে পড়ে অটোটি। ঠিক সেই মুহূর্তে অটোটিকে ওভারটেক করে আর একটি ছোট গাড়িও যাচ্ছিল ফরাক্কার দিকে। অটোটি গিয়ে লাগে সেই গাড়ির পিছনে। সে গাড়িটিরও পিছনের অংশ ভেঙে যায়।
প্রচণ্ড শব্দ শুনেই আশপাশের লোকজন ছুটে এসে উল্টে যাওয়া স্করপিও গাড়িটি থেকে দুজনকে বের করে নিয়ে যায় পাশেই মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। গোটা রাস্তা জুড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে থাকা ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় ৩ জনের। আহত ১০ জনকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জনার্দন মণ্ডল নামে একজন মারা যান বিকেলে হাসপাতালেই। আহত ৯ জনের নাম সুনীল মণ্ডল, রামচন্দ্র মণ্ডল, উকিল মণ্ডল, রূপচাদ মণ্ডল,রাজু মণ্ডল,দীপক মণ্ডল (অটোর চালক), অপূর্ব সাহা, বাবলু মণ্ডল, সনাতন মণ্ডল। এ দিন জঙ্গিপুরে চরে যার জমিতে ফসল কাটতে এসেছিলেন সেই চাষি তোজাম্মেল শেখ জানান, প্রতিবারই এই সময় চরের জমিতে কলাই ও মটর কাটতে আসেন ওই এলাকার শ্রমিকেরা। এখনও চরে অন্তত ১০০ শ্রমিক রয়েছে বিভিন্ন জমিতে ফসল কাটার জন্য। এরা এসেছিল ২০ থেকে ২৮ দিন আগে। অটোটিও মালদহের ওই গ্রামেরই। ওই অটোটি এর আগেও এসেছে গ্রামের শ্রমিকদের নিয়ে। তিনি বলেন, “বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এদের প্রত্যেককে ৫ থেকে ৬ হাজার করে টাকা মিটিয়ে দিয়ে অটোতে চড়িয়ে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ খবর পাই দুর্ঘটনার। মালদহের গ্রামের খবর দিলে সন্ধে নাগাদ তারা জঙ্গিপুরে আসে। আমিও ছুটে যাই জঙ্গিপুর হাসপাতালে।”
জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “স্করপিও গাড়িটির কারণেই এই দুর্ঘটনা। যার ফলে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছে অটোর ৯ জন যাত্রীও।” জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্রাফিক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “গাড়িটির গতি ছিল অত্যন্ত বেশি। ফলে সামনের চাকা ফেটে গেলেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে অন্য লেনে উঠে গিয়ে যাত্রী বোঝাই অটোতে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত
করে দেখা হচ্ছে।”