নিশ্চিন্তে: রসিকবিল মিনি জু’য়ে গন্ধগোকুল ও বনমুরগি। নিজস্ব চিত্র
ঠিকানা বদলালেও দস্যিপনা কমেনি ‘ত্রয়ী’র। কখনও ঘেরাটোপের তারজালি ধরে ঝুলে পড়ছে। কখনও বাক্সের ওপর বসে আড়চোখে চারদিক দেখে নিচ্ছে। মাঝেমধ্যে আবার নিজেরাই হুটোপুটিতে মেতে উঠছে। কোচবিহারের রসিকবিল মিনি জু’য়ের নতুন অতিথিদের এ ভাবেই প্রথম দিনটি কাটল। সকালে ভোরের আলো ফোটার পর থেকে প্রায় দিনভর প্রত্যেকেই খোশ মেজাজে ছিল। নতুন পরিবেশে এ ভাবে মানিয়ে নিতে দেখে স্বস্তি বনকর্তাদের মধ্যে। ওই ‘ত্রয়ী’ আসলে তিনটি গন্ধগোকুল।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক থেকে সোমবার ওই তিনটি গন্ধগোকুলকে রসিকবিলে আনা হয়। জঙ্গলে বেশি দেখা যায় এমন প্রজাতির ওই গন্ধগোকুলদের দু’টি পুরুষ, একটি স্ত্রী। রসিকবিলে পৌঁছনোর পর প্রাণী চিকিৎসক সেগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে নির্দিষ্ট ঘেরাটোপ দেওয়া চত্বরে প্রাণী তিনটিকে রাখা হয়। মঙ্গলবার প্রথম রসিকবিলের ভোর দেখল ওরা। কোচবিহারের ডিএফও বিমান বিশ্বাস বলেন, “নতুন অতিথিরা নিজেদের মতো সারাদিন কাটিয়েছে। খাবারও খেয়েছে। নতুন পরিবেশে যাতে কারও অসুবিধে না হয় সেসবই বিশেষ ভাবে দেখা হচ্ছে।”
ওই মিনি জু সূত্রেই জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের ওই চিড়িয়াখানা থেকে একইসঙ্গে আনা হয়েছে চারটি বনমুরগিও। নির্দিষ্ট তারজালি দেওয়া ঘেরাটোপের ভিতরেই ওদের রাখা হয়েছে। তারাও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই ঘেরাটোপে। এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে না ঠিকানা বদল হয়েছে ওই বনমুরগিদের।’’
মিনি জু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রসিকবিলে ওই প্রাণীদের নিয়ে আসায় সেখানকার আকর্ষণ আরও বাড়বে। চিতাবাঘ, ঘড়িয়াল, হরিণ, কাছিম, ময়ূরের মতো প্রাণী, পাখিদের তালিকায় এবার যুক্ত হল ওই গন্ধগোকুল ও বনমুরগি। কোচবিহারের রেঞ্জ অফিসার সুরঞ্জন সরকার জানান, নতুন ঠিকানায় এসেও দস্যিপনা করছে ওই তিনটি প্রাণীই। হয়তো নতুন লাগছে বলে। বনমুরগিরাও কিন্তু দারুণ কাটাচ্ছে।
খুশি পরিবেশপ্রেমীরাও। এক পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্তা অনিমেষ বসু বলেন, “পাম সিভেট প্রজাতির গন্ধগোকুল মূলত জঙ্গলে দেখা যায়। জনবহুল এলাকায় দেখা গন্ধগোকুলের থেকে খানিকটা ভিন্ন। বনমুরগিও জঙ্গল ছাড়া সেভাবে দেখা যায় না। তাই ওই প্রাণীরা আসায় রসিকবিলের আকর্ষণ বাড়বে। জীববিদ্যা নিয়ে গবেষণায় আগ্রহীদের জন্যেও রসিকবিলের জীব বৈচিত্র্যের সম্ভারও বাড়াতে হবে।’’