ধৃত: অনুপ তামাং। থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে। নিজস্ব চিত্র
বেলা তখন সবে ১১টা। চম্পাসারি রোডের ধারে প্রধাননগর শাখা ডাকঘরে সব ভিড় জমেছে। ঠিক তখনই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা দফতর। এ-দিক ও-দিক ছিটকে পড়ে রাবারের মতো কিছু টুকরো। শব্দ আর কালো ধোঁয়ায় ঘরে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। ওই শাখার পোস্টমাস্টার অর্চনা দে বলেন, ‘‘দশ-বারোটা চকলেট বোমা একসঙ্গে ফাটলে যেমন আওয়াজ হয়, ঠিক সেই রকম বিকট শব্দ। আমার কর্মজীবনে এরকম ঘটনার সম্মুখীন কোনও দিনও হইনি।’’ আতঙ্ক কাটলে দেখা যায়, এই বিস্ফোরণে কোনও হতাহত নেই। যাঁর নামে পার্সেল এসেছিল, সেই অনুপ তামাংকে দীর্ঘ জেরার পরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডাকবিভাগের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু হয়েছে। ডিসি পশ্চিম জানিয়েছেন, তদন্তের জন্য পঞ্জাব পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’
কী ভাবে, কোথা থেকে হল এই বিস্ফোরণ? প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, একটি পার্সেল থেকে হয়েছে বিস্ফোরণ। ডাকঘর সূত্রে খবর, ঠিক দু’মিনিট আগেই ডাককর্মী পবন রায় মেলের গাড়ি থেকে ওই পার্সেলসমেত ব্যাগ এনে দফতরের মেঝেতে রেখেছিলেন। তার পরেই বিস্ফোরণ। প্রধাননগর থানার অন্তর্গত চম্পাদারিতে এই ডাকঘরটি। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পার্সেলটি এসেছিল জনৈক অনুপ তামাংয়ের নামে। তিনি প্রধাননগরের রাজীবনগরের বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্সেলে এয়ারগানের গুলি ছিল। সেগুলি এসেছিল অমৃতসর থেকে।
পোস্টে বিস্ফোরক কিছু আনা নেওয়া নিয়ম বিরুদ্ধ, জানিয়েছে পুলিশ। বিস্ফোরণের কথা জানার পরে প্রধাননগর থানা থেকে পুলিশ যায়। আসেন কমিশনারেটের ডিসি (পশ্চিম) কুমারভূষণ সিংহ, বম্ব স্কোয়াড। কর্মীদের দফতরের বাইরে বের করে ব্যাগ ছাড়াও সমস্ত পার্সেল পরীক্ষার পর বিস্ফোরণের অবশিষ্ট সংগ্রহ করে পুলিশ। কুমারভূষণ সিংহ বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। যাঁর পার্সেল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ পুলিশ জানিয়েছেন, অনুপ তাদের বলেন, তিনি কিছু দিন আগে একটি এয়ারগান কিনেছিলেন পঞ্জাবের একটি সংস্থা থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কিছু বুকিং করিনি। সেই সংস্থাই একটা বাক্স পাঠাবে বলে আমায় জানিয়েছিল।’’
ডাক বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, পার্সেল আসার আগে এ দিন ওই শাখায় ফোন করেন অনুপ তামাং। ঘটনার পরেই তাঁকে ফোন করে শাখা দপ্তরে আসতে বলেন কর্তৃপক্ষ। বিস্ফোরণ সম্পর্কে তাঁকে জানানো হয়নি। প্রথমে গররাজি থাকলেও তিনি পার্সেল নিতে হাজির হন। তখন তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ জেরা করা হয়।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্সেল বুকিংয়ের সময় তার ভিতরে কী রয়েছে, তা ডাককর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যাচাই করা হয়। কোনও যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে তা পরীক্ষা করা হয় না। পঞ্জাব থেকে কী ভাবে ওই পার্সেলটি পাঠানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ি প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার রতন সরকার বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তদন্ত হচ্ছে।’’ ডাক বিভাগের রেলওয়ে মেল সার্ভিস শাখার মাধ্যমেই পার্সেল শিলিগুড়িতে এসেছিল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, ‘‘পার্সেল ট্রেনে এসেছিল কিনা, খতিয়ে দেখে বলা সম্ভব।’’ আরএমএস সড়কপথেও পরিবহণ করে।