Bangla

Bengali Language: ‘সাথে’ নয় ‘সঙ্গে’ বলুন! ভাষা-প্রচারের নেপথ্যে প্রবাসী বাঙালি, খোঁজ পেল আনন্দবাজার অনলাইন

তিনি শিবপুর বিই কলেজের কৃতী ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আমেরিকা চলে যান। সেখানে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পেশাগত কাজ শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৯:০৪
Share:

‘সঙ্গে’ বলুন ‘সাথে’ নয় — পার্থ ভট্টাচার্যের উদ্যোগেই এই ব্যানার লাগানো হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র

বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগ নিয়ে উদ্যোগীকে খুঁজে পেল আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁর নাম পার্থ ভট্টাচার্য। বাস আমেরিকার নিউ জার্সিতে। বুধবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। পার্থ জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে তিনি ওই প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।

Advertisement

‘সঙ্গে’ বলুন ‘সাথে’ নয়। কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে এই মর্মে একটি ব্যানার দেখে মঙ্গলবার সেটি নিয়ে খবর লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ভাষাবিদের মতামতও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা শহরে ওই ব্যানার লাগিয়েছেন, তা জানা যাচ্ছিল না। আনন্দবাজার অনলাইনে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই কলকাতার একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের সঙ্গে নিজেদের উদ্যোগে যোগাযোগ করে। তারাই জানায়, এর পিছনে রয়েছেন প্রবাসী বাঙালি পার্থ।

বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনকে পার্থ জানিয়েছেন, বাংলা ভাষার ‘শুদ্ধকরণ’-এর অভিপ্রায়েই ওই ব্যানার তিনি একটি সংস্থাকে দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা, এমন ‘কাজ’ তিনি ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্তু ভাষা শুদ্ধকরণের এমন ভাবনার হঠাৎ কেন? পার্থ বলছেন, ‘‘হঠাৎ নয়। এটা আমার ছাত্রাবস্থার ভাবনা। তখন থেকেই শুনি, ‘সঙ্গে’ নয়, অনেকেই দিব্যি ‘সাথে’ বলছেন। কত জনকে এখনও বলতে শুনি ‘বিবাদমান’। ওটা যে ‘বিবদমান’ হবে, তা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। কত সহজে কত লোক ‘উপচার’-কে ‘উপাচার’ করে দিয়েছে। তখন থেকেই ভাবতাম, এটা নিয়ে বাঙালিকে সচেতন করতে হবে। কিন্তু এত দিনে কাউকে দেখলাম না এ সব নিয়ে কথা বলছেন! শুধু বইতেই রয়ে গেল এ সব শব্দ। তাই এই বয়সে এসে আমি একটা চেষ্টা করছি।’’

Advertisement

পার্থ শিবপুর বিই কলেজের কৃতী ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আমেরিকা চলে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পেশাগত কাজ শুরু করেন। অধুনা প্রবীণ পার্থের বক্তব্য, প্রবাসে থাকলেও তাঁর মন পড়ে থাকে বাংলায়। রবীন্দ্রনাথ এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অনুরাগী হিসাবে তিনি চিরকালই চেয়েছেন বাংলা ভাষার জন্য কিছু করতে। পার্থের কথায়, ‘‘নীরদ সি চৌধুরী তো কবেই বলেছেন ‘আত্মঘাতী বাঙালি’! সেই বাঙালির জন্য যখন কেউ কিছু করছে না, তখন আমাকেই ভাবতে হচ্ছে। কাউকে না কাউকে তো করতেই হত।’’

পরিচিতদের অনেকেই পার্থকে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত খবরটির কথা জানিয়েছেন। আর পার্থ জানিয়েছেন, শুধু সাদার্ন অ্যাভিনিউ নয়, কলকাতার বিভিন্ন জায়গাতেই ‘সঙ্গে’ বলুন ‘সাথে’ নয় ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তার মধ্যে কলেজ স্ট্রিটও রয়েছে।

তাঁর ভাবনা বাস্তবায়িত করতে কলকাতার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে পার্থ যোগাযোগ করেন। তার পরেই ওই ব্যানারের জন্ম। সংস্থাটির কর্ণধার প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘পার্থ ভট্টাচার্য আমাদের কাজটা করতে বলেছিলেন। উনি আমেরিকায় থাকেন। ওঁর কথাতেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় আমরা ওই ব্যানার টাঙিয়েছি।’’ প্রদীপও বলেছেন, ‘‘ভাষার শুদ্ধতার জন্যই ওঁর এই পদক্ষেপ। খুব অল্প সংখ্যক ব্যানার তৈরি করে আমাদের বলা হয়েছিল গোলপার্ক, কলেজ স্ট্রিটের মতো জায়গায় লাগাতে।’’

দুর্গাপুজোর ৮-১০ দিন আগে এই ব্যানার কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়। গত ক’দিনের মধ্যেই ব্যানারগুলির কয়েকটি ছিঁড়ে গিয়েছে। তা নিয়ে প্রদীপের আক্ষেপ রয়েছে। তবে পার্থ তা নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ভাবনা শহরবাসীর যে পছন্দ হয়েছে, তা বেশ বুঝতে পেরেছি। ওই ব্যানার নিয়ে খবর প্রকাশের পর তো বিষয়টা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে!’’ পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই সংস্থা এবং আমি ছাড়া এই ভাবনার রূপায়ণে আর কারও কোনও ভূমিকা নেই।’’

কলকাতায় অনেকের সঙ্গেই পার্থের যোগাযোগ আছে। তবে এই কাজে তাঁদের তেমন কোনও ‘সাহায্য’ পাননি বলেই দাবি তাঁর। পার্থ বলছেন, ‘‘খুব কম সংখ্যক মানুষ আছেন, যাঁদের সাহায্য আমি পেয়েছি।’’ পার্থ মনে করেন, বাম আমলে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ধসে গিয়েছে। ৩৪ বছরের বামশাসনে বাঙালি অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। নিজের এই পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? পার্থের কথায়, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই। আমার এই ভাবনাতেও কোথাও কোনও রাজনীতি নেই। কাজেই কাউকে এ নিয়ে বলারও কিছু নেই। আর কেনই বা বলব!’’

তাঁর এর পরের পরিকল্পনা কী? পার্থ জানাচ্ছেন, এখনও ভাবেননি। কারণ, একার পক্ষে এত দ্রুত কোনও ভাবনা রূপায়ণের চেষ্টায় হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ছাড়া খরচও আছে। পার্থের কথায়, ‘‘এক একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে খরচ অনেক। প্রায় ২৫ হাজার টাকা। যদিও আমি সেই খরচটা করতে পারি। করার সামর্থ্যও আছে। কিন্তু এটাও ভাবি যে, একা-একা কেন করব! কলকাতায় থাকা বাঙালিদের অনেকেই এই কাজটা অনায়াসে করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা কেউ করেন না। এটাই আশ্চর্যের।’’ তবে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে ভবিষ্যতে তাঁর কিছু করার ইচ্ছা আছে।

এমনিতে একটি অসরকারি এবং অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত পার্থ। সেই সংস্থার কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবেই কলকাতার এই ব্যানার-প্রকল্প। কিন্তু ঘরের খেয়ে বনের এই মোষ তাড়িয়ে তাঁর লাভ কী? পার্থের জবাব, ‘‘আমি যা করছি, তাতে বাঙালিরই লাভ হবে। আমার আর কী লাভ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement