এন্টালির অবস্থানে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছিলই। প্রজাতন্ত্র দিবসে সেই প্রতিবাদে হাতিয়ার হল সংবিধান। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ডাক দিয়েই প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করল এ রাজ্যের সব অ-বিজেপি দল। বিজেপি অবশ্য সিএএ-র সমর্থনে ‘অভিনন্দন যাত্রা’ এবং বাড়ি বাড়ি প্রচার কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার টুইটে বার্তা দিয়েছেন, ‘প্রজাতন্ত্র দিবসে আসুন আমরা সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ নিই এবং সার্বভোম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ন্যায়-বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের যে নীতি সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বীকৃত, তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি’। সিএএ, এনআরসি-র প্রতিবাদে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের টানা ধর্না কর্মসূচি চলছে। ছাত্রদের পরে এখন ওই মঞ্চের দায়িত্বে মহিলা সংগঠন। রাজভবনে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজ্যপালের চা-চক্র সেরে বেরিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় কিছু ক্ষণের জন্য রানি রাসমণিতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজাদের ধর্না-মঞ্চে গিয়েছিলেন মমতা। ময়দানে গাঁধী মূর্তি সংলগ্ন রাস্তার ক্যানভাসে কাল, মঙ্গলবার ছবি এঁকে সিএএ, এনআরসি-সহ বিভাজনের রাজনীতির প্রতিবাদ করবেন শিল্পীরা। সেখানেও ছবি এঁকে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
সিপিএম, কংগ্রেস-সহ ২০টি দল এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে ধর্না-অবস্থানের কর্মসূচি নিয়েছিল। রাজ্য জুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সভা ছিল বামেদের। কলকাতা ও আশেপাশে অন্তত ৫০টি জায়গায় অবস্থানে যোগ দিয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এন্টালি মার্কেটের সামনে অবস্থানে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। ঢাকুরিয়ার অবস্থানে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য, আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখ। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী গিয়েছিলেন পার্ক সার্কাসের ধর্নায় সংহতি জানাতে, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ছিলেন বেলগাছিয়ার সভায়।
বিমানবাবু এ দিন বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নেমেছেন। এই প্রতিবাদ আরও বড় হবে। দেশের ও রাজ্যের সব রাজপথের দখল নেবেন মানুষ। তাঁদের মতো করেই মানুষ প্রতিবাদ জানাবেন। তাকে দমন করা যাবে না।’’ সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে বাম ও কংগ্রেসের ভূমিকাকে তৃণমূল নেত্রী যে আক্রমণ করছেন, তার জবাবে বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তিনি এই আইন মানছেন না অথচ অন্য কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে! আমরা বাম ও কংগ্রেস রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছি, তাতে ওঁদের আপত্তি। আমরা বলছি, এখন তো শুরু। শেষটা দেখার জন্য তৈরি থাকুন!’’
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশের বিকৃত ম্যাপ! তুমুল বিতর্কে কলকাতা পুরসভা
প্রজাতন্ত্র দিবসে কংগ্রেসের সভায় সংবিধান রক্ষার শপথ। —নিজস্ব চিত্র।
সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের পরে সোমেনবাবু বলেন, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের ভিতরে এবং বাইরে দিনের পর দিন মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন! আবার প্রধানমন্ত্রী বলছেন এনআরসি নিয়ে আলোচনাই হয়নি। মিথ্যাচারের দায়ে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকার কোনও অধিকার নেই।’’ এআইসিসি-র নির্দেশে সব রাজ্যে কংগ্রেসের নিজস্ব কর্মসূচিও ছিল। বৌবাজারে প্রদেশ কংগ্রেসের সভায় উপস্থিত ছিলেন সোমেনবাবু, প্রদীপবাবু, দেবপ্রসাদ রায়, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ দলের প্রদেশ নেতৃত্ব।