ডানলপের মাঠে নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী এলেন। বন্ধ ডানলপ কারখানা চত্বরে মাঠ উপচে যাওয়া লোক দেখলেন। কিন্তু ডানলপ কারখানার পুনরুজ্জীবন নিয়ে আলাদা করে কিছুই বললেন না। প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল না সিঙ্গুর নিয়ে কোনও কথাও।
বন্ধ এই কারখানা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে কোনও আশ্বাসবাণী শোনার প্রত্যাশা যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের হতাশ হতে হল। তবে সোমবার সাহাগঞ্জে এসে সার্বিক ভাবে হুগলি জেলার শিল্পের বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন মোদী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে ‘আসল বাংলা’ গড়বেন। যার অন্যতম হবে যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান।
ডানলপের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির জন্য হাইকোর্ট নিযুক্ত লিকুইডেটরের তত্বাবধানে সম্ভাব্য ক্রেতাদের পরিদর্শন হয়েছে গত বৃহস্পতি এবং শুক্রবার। সম্পত্তি বেচে বকেয়া মিলবে কিনা, সেই দিকে চেয়ে আছেন শ্রমিকেরা। এই পরিস্থিতিতে ডানলপ নিয়ে নতুন কোনও প্রতিশ্রুতি মেলে কি না, তা নিয়ে মোদীর সভায় এখানকার শ্রমিকেরা কান পেতেছিলেন। রামেশ্বর পাসোয়ান নামে ডানলপের এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘আমাদের দু’টো চাহিদা। প্রথমত, বকেয়া সব পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, সরকার হাতে নিয়ে শিল্প করুক। তা সে মোদী হোন বা দিদি। প্রধানমন্ত্রী ডানলপের কথা আলাদা করে না বললেও সার্বিক ভাবে শিল্পের কথা বলেছেন। তার আওতায় আমরাও পড়লে ভাল।’’ ডানলপ ভারতবর্ষের প্রথম টায়ার কারখানা। বেশ কয়েক বছর কারখানাটি বন্ধ। যন্ত্রপাতি লোপাট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এখানে যুদ্ধবিমানের টায়ারও তৈরি হত।
প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘হুগলি জেলা ভারতে এক প্রকার উদ্যোগের জায়গা ছিল। এই জেলার দুই প্রান্তে জুটমিল। লোহা এবং স্টিলের বড় বড় কারখানা ছিল। প্রচুর উৎপাদন হত। কিন্তু আজ হুগলির কী অবস্থা, সেটা আপনারা ভালই জানেন। বাংলার লোকজনকে কাজের জন্য অন্যান্য রাজ্যে যেতে হয়।’’ তাঁর সংযোজন, বাংলার জুটমিল দেশের অধিকাংশ চাহিদা পূরণ করত। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে পাটচাষিদের জন্য বিশেষ চিন্তা করা হয়েছে। এখন গম প্যাকেটজাত করতে চটের বস্তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চিনি প্যাকিংয়ের জন্যও চটের বস্তা কাজে লাগানো হচ্ছে।
মোদী আরও বলেন, ‘‘হুগলির আলু চাষিদের অবস্থাও কারও অজানা নয়। এখানের আলু আর ধানচাষিদের কারা লুটছেন, আমার থেকে আপনারা বেশি জানেন। যত দিন এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা না হচ্ছে, যত দিন চাষিদের উৎপাদনের জন্য স্বাধীনতা মিলছে, তত দিন তাঁদের কোনও উপকার হবে না।’’
ডানলপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উচ্চবাচ্য না করায় তাঁকে বিধেছে বিরোধীরা। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ডানলপের শ্রমিকেরা আশা করেছিল, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জন্য কিছু ঘোষণা করবেন। কিন্তু তিনি ডানলপকে হতাশ করেছেন। এতে অবশ্য আমরা আশ্চর্য হইনি। এটাই ওদের স্বরূপ। ডানলপের পাশে বিরোধী নেত্রী থাকার সময় থেকেই একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। এখনও আছেন। শ্রমিকদের ১০ হাজার টাকা ভাতা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।’’
জেলার কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘হুগলি জেলায় এসে ডানলপ বা সিঙ্গুর নিয়ে কোনও কথা বললেন না প্রধানমন্ত্রী। চটশিল্পের কথা বললেন বটে কিন্তু কেন্দ্রের উদ্যোগ মানে শুধুই বস্তা ব্যবহার। পাশের বাংলাদেশ যখন চটজাত পণ্যের ব্যবহারের রকম বাড়িয়ে নিচ্ছে, এখানে তেমন উদ্যোগ কোথায়?’’ এলাকার প্রাক্তন সাংসদ, সিপিএমের রূপচাঁদ পালের মতে, ‘‘ডানলপ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কারখানা ছিল। তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বললেন না। বেহাল শিল্প এবং কৃষির কথা বললেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনও নীতির কথা বললেন না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ দূরের কথা, মানুষকে আরও নিরাশ করলেন।’’