রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
ফের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রুখতে কী ভাবে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা উচিত, সে বিষয়ে রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে ফের টুইট করলেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার সকালের সে টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে রাজ্যপাল লিখলেন, ‘‘ভোগান্তির দিকে নজর দিন, সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে নয়।’’
লম্বা বক্তব্য থাকায় দু’ভাগে টুইট করেছেন রাজ্যপাল। প্রথমেই জনসাধারণের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’র নীতি এড়িয়ে চলতে বলেছেন। তার পরে লিখেছেন, ‘‘এটা রাজ্যপাল বা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ছুরি শানানোর সময় নয়।’’ বাস্তব পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা জরুরি, ‘বাহাদুরি’ দেখানো নয়— এমনও লিখেছেন রাজ্যপাল।
টুইটের দ্বিতীয় অংশের শুরুতেই রাজ্যপাল লিখেছেন— ‘আবেদন’। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আবেদন জানাচ্ছেন তিনি। কিন্তু টুইটের বয়ান ঠিক আবেদনের মতো নয়। বেশ কড়া বয়ানেই টুইট করেছেন ধনখড়। তিনি লিখেছেন, ‘‘অজুহাত খোঁজা, বলির পাঁঠা খোঁজা, বোঝা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসুন।’’ তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রের মতো’ পরিস্থিতি তৈরি করা ‘অসাংবিধানিক’।
রাজ্যপালের টুইট:
আরও পড়ুন: রাজ্যের ৫ জেলায় নতুন সংক্রমণ ২৮ জনের, এই মুহূর্তে মোট আক্রান্ত ৫২২
চলতি পরিস্থিতি নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সঙ্ঘাত গত কয়েক দিনে তুঙ্গে পৌঁছেছিল। যে সঙ্ঘাত ধনখড় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই অন্য মাত্রা পেয়েছিল, লকডাউনের শুরু দিকে তা কিছুটা থেমে ছিল। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, পরিস্থিতি ফের ক্রমশ ততই উত্তপ্ত হয়েছে। টুইটারে রাজ্যপাল কখনও রাজ্যের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন, কখনও রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। কখনও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিজের বিরক্তি ব্যক্ত করেছেন। কখনও আবার সে চিঠির জবাব যথাযথ মনে না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে এসএমএস পাঠিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: চোক্সী-মাল্যদের, ৬৮ হাজার কোটির ঋণ মকুব করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক!
সঙ্ঘাত তুঙ্গে ওঠে ২৩ এপ্রিল। রাজ্যপালকে সে দিন পাঁচ পাতার একটি কড়া চিঠি পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে একজন ‘নির্বাচিত’ মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল যে ‘মনোনীত’ পদাধিকারী, সেটা ধনখড়ের ভুলে যাওয়া উচিত নয়— মুখ্যমন্ত্রী এমনই বার্তা দেন সে চিঠিতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা পাঁচ পাতার চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দেন রাজ্যপাল। পরের দিন, অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল ১৪ পাতার চিঠি লিখে আরও কঠোর ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী আর সে চিঠির জবাব দেননি।
মঙ্গলবার ফের চড়ল পারদ। কোনও বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে এই টুইট কি না, তা টুইটের বয়ানে স্পষ্ট ভাবে লেখা হয়নি। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতে না যাওয়ার বা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘ছুরি’ না ‘শানানো’র পরামর্শ বার বার যে ভাবে রাজ্যপাল এই টুইটে দিয়েছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনের প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের এ দিনের টুইট বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বিকেলে তিনি যে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, সেখানে ইঙ্গিত দেন যে, কেন্দ্রের কোনও কোনও ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট নন। তার প্রেক্ষিতেই রাজ্যপাল মঙ্গলবার টুইট করলেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানা ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের সঙ্গে। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা, তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি প্রকাশযোগ্য বলে বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)