করোনা সঙ্কটেের জেরে এ বছর আর এই দৃশ্য দেখা যাবে না ধর্মতলায়। —ফাইল চিত্র।
শহিদ দিবসে এ বার আর সমাবেশ হচ্ছে না ধর্মতলায়। জানিয়ে দিলেন খোদ তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব বিধির মাঝে এ বছর আর সমাবেশ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল আগেই। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে এত দিন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনও ঘোষণা ছিল না। শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনের ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এ বারে আর সমাবেশ করা সম্ভব হবে না। তবে তৃণমূল যে ভাবে বছরের সবচেয়ে বড় সমাবেশের আয়োজন বন্ধ রাখছে, সে ভাবে অন্যান্য দলকেও বিভিন্ন কর্মসূচি বন্ধ রাখত হবে বলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যে কর্মসূচির উপরে পুলিশ গুলি চালানোয় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেই মহাকরণ অভিযানের ডাক যে হেতু যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে হেতু এখনও তৃণমূল যুব কংগ্রেসই শহিদ দিবসের মূল আয়োজক। তবে আয়োজক যে-ই হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রধান বক্তা থাকেন ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে মঞ্চ বেঁধে ধর্মতলা এবং সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাংশ জুড়ে যে জমায়েত ওই দিন তৃণমূল করে, তা প্রতি বছরই তৃণমূলের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় (নির্বাচনের বছরে ব্রিগেড সমাবেশ বাদ দিলে)। এ বছর ধর্মতলায় ওই জমায়েত হবে না।
কোভিডের সংক্রমণ রুখতে যে ভাবে সামাজিক দূরত্বের খেয়াল রাখতে হচ্ছে, তাতে ছোট বা বড় কোনও জমায়েতেরই অনুমতি এখন নেই। ২১ জুলাইয়ের আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে কি না, সে দিকে লক্ষ্য ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই সমাবেশ বাতিলের কথা এত দিন ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু হাতে এখন আর এক মাসও নেই। শহিদ দিবস মাত্র সপ্তাহ তিনেক দূরে। করোনা পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত যে রকম, তাতে সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শহিদ দিবসের জন্য এক মাস ধরে যে প্রস্তুতি চালায় তৃণমূল, গোটা রাজ্যে ঘুরে ঘুরে যে সব প্রস্তুতি সভা করে বেড়ান তৃণমূল নেতারা, সে সবও আর সম্ভব নয়। অতএব ২১ জুলাই ধর্মতলায় সমাবেশ করা যে সম্ভব হবে না, তা নিয়ে আর কোনও অস্পষ্টতা ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সে কথা নিজেই বলে দেওয়ায় আর কোনও সংশয়ই রইল না।
আরও পড়ুন: বাড়ছে না বাস ভাড়া, নিয়ম মানলে ১ জুলাই থেকে মেট্রো চালু কলকাতায়
‘‘আগের মতো করে এ বার আর একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ হবে না,’’— শুক্রবার এমনই বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ধর্মতলার জমায়েতের বদলে ভার্চুয়াল র্যালি হতে পারে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। শহিদ দিবসেই ধর্মতলায় জমায়েত করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা তৃণমূলের নেই। এর আগেও এমন হয়েছে যে, ২১ জুলাই জমায়েত সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে শহিদ বেদি তৈরি করে ওই তারিখেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা। পরে সুবিধাজনক দিন দেখে সমাবেশ করে নেওয়া হয়েছে। এ বারও তেমন কোনও পরিকল্পনা হতে পারে কি না, স্পষ্ট নয়। তবে ভার্চুয়াল র্যালি আয়োজনের বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা চলছে বলে খবর।
১০ জুন ‘বাংলার যুবশক্তি’ নামে এক নতুন কর্মসূচির সূচনা করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক মাসের মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ যুবক-যুবতীকে এই নতুন কর্মসূচি তথা নেটওয়ার্কে জুড়ে নেওয়া হবে বলে অভিষেক সে দিন জানিয়েছিলেন। ২১ জুলাই যদি ধর্মতলায় জমায়েত করা না যায়, তা হলে ভার্চুয়াল র্যালি করা হতে পারে বলেও তখনই শোনা গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে বাংলার যুবশক্তির নতুন সদস্যরাই ভার্চুয়াল মাধ্যমে এক লক্ষের জমায়েত ঘটিয়ে দিতে পারবেন, এমনও চর্চাও শুরু হয়েছিল। তবে সে সব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন কিছু বলেননি।
আরও পড়ুন: লকডাউনের পর চরম আর্থিক অনটন! মা-দুই ছেলের বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা কলকাতায়
তৃণমূল যেমন শহিদ দিবসের জমায়েত স্থগিত করছে, তেমন অন্যান্য দলকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে— এ কথাও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। কোনও দলের নাম তিনি করেননি। তবে ইঙ্গিত যে বিজেপির দিকে ছিল, তা স্পষ্ট। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, বিডিও অফিস ভাঙচুর বা থানায় হাঙ্গামার ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বেশ উষ্মা প্রকাশ করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি হোক বা বাইক র্যালি, এ সব এখন বন্ধ রাখতে হবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যদি আমি একুশে জুলাই স্থগিত রাখতে পারি, তা হলে আপনাদেরও এ সব টুকটাক জিনিস স্থগিত রাখতে হবে।’’ কখনও কখনও বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে কাজ করতে হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইদ হোক বা রথযাত্রার জমায়েত, সবই যখন বন্ধ থাকছে, তখন রাজনৈতিক কর্মসূচিও এখন বন্ধই থাকবে— বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কয়েকটি দল লকডাউন আইন মানছে না বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আইন ভাঙছেন, আবার বলছেন এফআইআর কেন হবে!’’ আইন ভাঙলে আইনি পদক্ষেপ হবে বলে এ দিন সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।