প্রতীকী ছবি।
সেটা বাম জমানা। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে দু’ভাইকে খুন হতে দেখেছিলেন হুগলির জাঙ্গিপাড়ার অ-বাম বিরোধী দলের সমর্থক হরিপদ সিংহরায়। তার পরে কেটে গিয়েছে বিশ বছর, রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে গিয়েছে বাংলায়। তবু সেই মামলার বিচার শেষ হয়নি। হরিপদবাবু জানান, গত দু’দশকে চার-চার বার সরকারি কৌঁসুলি বদল হয়েছে। কিন্তু বিচার অধরাই! তাঁর অভিজ্ঞতা, সরকারি কৌঁসুলিরা প্রায়শই মামলায় গা-ছাড়া মনোভাব দেখাতেন কিংবা পরোক্ষে সুবিধা করে দিতেন অভিযুক্তদের।
সুরাহা পেতে হরিপদবাবু রাজ্যের লিগ্যাল রিমামব্রান্সারকে চিঠি লেখেন। এই মামলায় নতুন সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বিভাস চট্টোপাধ্যায়কে। হরিপদবাবুর আশা, ‘‘এ বার যদি কিছু হয়।’’
২০০১ সালের ১৩ এপ্রিলের কথা বলতে গিয়ে আজও শিউরে ওঠেন হরিপদবাবু। বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে এক দল দুষ্কৃতী। চলছে ভাঙচুর। প্রাণভয়ে পরিবার-সহ ঘরে সিঁটিয়ে রয়েছেন তিন ভাই। হরিপদবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে ছোট ভাই দয়ালকে টেনে নিয়ে গেল ওরা। উঠোনে দাঁড় করিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল! চলে যেতে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘একটা খুন করলেও যা হবে, দু’টো করলেও তা-ই।’ ফিরে এসে আমার দাদা হারাধনকেও টেনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলল।’’
এই ঘটনায় নাম জড়ায় সিপিএম নেতা এবং তাঁদের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। হরিপদবাবু জানান, তাঁরা কংগ্রেসি পরিবার। তৃণমূলের জন্মলগ্নেই ওই দলে যোগ দেন। রাজনৈতিক শত্রুতায় তাঁদের জমির ধানও লুট হয়েছে। জমি-বিবাদকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাঁর দুই ভাইকে খুন করা হয়। খুনের আগের রাতেও তাঁদের বাড়িতে হামলা এবং টাকা ও সোনা লুট হয়। তার পরে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়েও মেলেনি।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্থানীয় সাংসদ আকবর আলি খোন্দকার সিংহরায় ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ান। মমতার নেতৃত্বে মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল সিংহরায় পরিবার। কিন্তু দুষ্কৃতীদের হুমকিতে সৎকার করতে হয় অন্য গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে। ১০ বছর ভিটেছাড়া থাকার পরে রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ আসায় গ্রামে ফেরেন হরিপদবাবুরা। তখন কাঠামোটুকু ছাড়া বাড়ি বলতে আর কিছু ছিল না। ভিটে ভরে গিয়েছিল জঙ্গলে। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতবদলের ফলে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভিটে এবং চাষের জমি ফিরে পেয়েছিলেন তাঁরা।
বিভাসবাবু বলছেন, ‘‘তদন্তকারী অফিসার ২০০৪-এ অবসর নেন। এখন তিনি অসুস্থ, কম শোনেন। এক সাক্ষী মারা গিয়েছেন। বেশ কিছু নথি উধাও। তবু এই পরিবারকে বিচার দিতে এক বার শেষ চেষ্টা করব।’’