আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ।—ছবি সংগৃহীত।
রাজ্যের সেরা সরকারি দাঁতের হাসপাতালে প্রতি দিন দূরদূরান্তের জেলা থেকে দাঁত ও মাড়ির জটিল ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের জন্য আসা রোগীদের নিশ্চিত পরিণতি— রেফার হওয়া!
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে স্বাস্থ্যকর্তারা যতই রেফার-ব্যাধি বন্ধ করার কথা বলুন, গত ৬ মাস ধরে কলকাতার আর আহমেদ ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অলিখিত নিয়ম এটাই। গত ৬ মাস সেখানে ক্যানসার বা টিউমারের বড় কোনও অস্ত্রোপচার হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দাঁতের চিকিৎসায় রাজ্যের একমাত্র রেফারাল হাসপাতালে এসে রোগীদের ফের রেফার হতে হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। সেখানেও যে সকলে ঠাঁই পাচ্ছেন তা নয়। অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমান রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে।
তবে আপাতত সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা নেই। কারণ, ক্যানসার বা টিউমারের বড় অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্যের ‘সেরা’ সরকারি দাঁতের হাসপাতাল তথা স্নাতকোত্তর পঠনপাঠনের একমাত্র মেডিক্যাল কলেজে এখনও পর্যন্ত আইসিইউ নেই! সবেমাত্র গত এপ্রিলে এই আইসিইউ নির্মাণ শুরু হয়েছে। হাসপাতালের সুপার রাহুল সামন্ত বলেন, ‘‘সব কিছু এক দিনে হয়ে যেতে পারে না। আমাদের নতুন ভবনের সাত তলায় আইসিইউ তৈরি হচ্ছে।’’
কিন্তু এত দিন কী ভাবে আইসিইউ ছাড়া চলছে? কেনই বা এত দিন আইসিইউ তৈরির কথা কারও মনে হয়নি? উত্তর দিতে চাননি স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি (ডেন্টাল) বিমলেন্দু সাহা। তবে রোগীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ৬ মাস আগে পর্যন্ত এই হাসপাতালে ক্যানসারের বড় অস্ত্রোপচার তা হলে কী করে হচ্ছিল?
আজ, মঙ্গলবার ক্যানসার দিবসের প্রাক্কালে জানা গিয়েছে, ‘আইসিইউ ব্যাকআপ’ ছাড়াই এত দিন অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সমস্যা দেখা দিলে পাঠানো হয়েছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউ-য়ে বা কোনও বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু নীলরতনে রোগীর যা চাপ, তাতে তাদের পক্ষেও আচমকা আইসিইউ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর বেসরকারি হাসপাতালে পাঠালে প্রচুর খরচ হচ্ছে রোগীর পরিবারের।
তা সত্ত্বেও অস্ত্রোপচার চলছিল। কিন্তু মাস ছ’য়েক আগে আইসিইউ ছাড়া অস্ত্রোপচার করার জন্য আদালতে রাজ্যের এক চিকিৎসকের বিপুল টাকা জরিমানা হয়। এর পরেই যে সার্জন আর আহমেদে এই অস্ত্রোপচার করতেন, তিনি বেঁকে বসেছেন। জেলার একটি ডেন্টাল কলেজের এই সার্জন স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ নির্দেশে সপ্তাহে তিন দিন আর আহমেদে অস্ত্রোপচার করতেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাসে অন্তত ২২টি জটিল অস্ত্রোপচার আর আহমেদে করতাম আইসিইউ ছাড়া, শুধুমাত্র রোগীদের মুখের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু আদালতের এই নির্দেশের পর আর সাহস পাচ্ছি না।’’
ওই চিকিৎসকের আরও বক্তব্য, ‘‘আর আহমেদে নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত নেই। ৭-৯ ঘণ্টার এক-একটা অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে আইসিইউয়ে রাখাই নিয়ম। এত দিন সদ্য অপারেশন হওয়া রোগীকে ট্রলিতে চাপিয়ে এপিসি রোড দিয়ে এনআরএস যেতে হত। সেখানেও অনেক সময় আইসিইউ মিলত না। এই ভাবে আর চালানো সম্ভব নয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তারাই মৌখিক ভাবে বড় অপারেশনের সব কেস রেফার করতে বলেছেন। আমরাও এনআরএস, এসএসকেএম বা চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে রেফার করে দিচ্ছি।’’