গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজনীতি থেকে ‘স্বেচ্ছাবসর’ নেওয়া উচিত কি না, ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন রেখেছিলেন বৃহস্পতিবার। যা নিয়ে জোরদার জল্পনা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক শিবিরে। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের পুত্র তথা বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। সেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ পর্যন্ত করলেন না। আরও একটি ফেসবুক পোস্টে কিছুটা প্রশমিত করলেন গুঞ্জন। তবে নিজের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ সম্পর্কে জল্পনা জিইয়ে রেখে দলের কর্মসূচিতেও গরহাজির থাকলেন।
বৃহস্পতিবার যে ফেসবুক পোস্ট শুভ্রাংশু করেছিলেন, তা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক শিবিরে। জল্পনা তৈরি হয়েছিল বিজেপি-র অন্দরেও। শুভ্রাংশু লিখেছিলেন, রাজনীতি থেকে কি স্বেচ্ছাবসর নেওয়া উচিত?
দলে ‘উপযুক্ত গুরুত্ব’ বা ‘বড় পদ’ না পেয়ে শুভ্রাংশু ক্ষুব্ধ বলেই স্বেচ্ছাবসরের ইচ্ছাপ্রকাশ— এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বিজেপি-র অন্দরে। তবে দলেরই অন্য একটি অংশের দাবি, কিছু দিন আগে পর্যন্তও এই ক্ষোভ ‘সঙ্গত’ ছিল। এখন আর নয়। কারণ, শুভ্রাংশুর বাবা মুকুলকে সদ্য দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদে বসিয়েছে বিজেপি।
শুভ্রাংশুর ফেসবুক পোস্টের পর বৃহস্পতিবার রাতেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টা শুরু করেছিল বিজেপি। ঘোষণা করা হয়, মণীশ শুক্লর খুনের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে টিটাগড় থানার সামনে থেকে ব্যারাকপুরের চিড়িয়া মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হবে। ওই মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল, শুভ্রাংশু, নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিংহ এবং ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিংহ। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘হাল্লা বোল র্যালি’।
শুক্রবার বিজেপির মিছিলে দেখা যায়নি শুভ্রাংশুকে। নিজস্ব চিত্র।
শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে শুভ্রাংশুকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দল, এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল রাজ্য বিজেপি-র তরফে। কিন্তু দল আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও শুক্রবারের মিছিলে শুভ্রাংশুকে দেখা যায়নি। তবে তাঁর বাবা মুকুল ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই অর্জুন সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তদের দেখা গিয়েছে মিছিলে হাঁটতে। মিছিল ব্যারাকপুর চিড়িয়া মোড়ে পৌঁছনোর পরে সেখানে পৌঁছে ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছে কৈলাসকেও। কিন্তু শুভ্রাংশুকে ধারেপাশে দেখা যায়নি।
এ দিন শুভ্রাংশুর ফেসবুক পোস্টে গুঞ্জন কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। তবে বিজেপি-র ‘অস্বস্তি’ পুরোপুরি কেটে যেতে পারে, এমন কিছু শুভ্রাংশু লেখেননি। তিনি শুধু এটুকু স্পষ্ট করেছেন যে, এখনই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন না। শুভ্রাংশু লিখেছেন, ‘রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেব কি নেব না, তা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যাব। জনসেবার মধ্য দিয়েই মানুষের মাঝে থেকে যাব। কারণ মানুষের মধ্যেই নারায়ণ বর্তমান। যে নারায়ণ, সেই জগন্নাথ, সেই রাম’।
তাঁর ‘বিতর্কিত এবং আলোচিত’ পোস্টের ব্যাখ্যা দিতে শুক্রবার তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন বলে প্রথমে জানিয়েছিলেন শুভ্রাংশু। সেখানে নিজের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপও ঘোষণা করতে পারেন বলে জল্পনা ছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে মুকুল-পুত্র জানিয়ে দেন যে তিনি, সাংবাদিক সম্মেলন করছেন না। তখনই মনে হয়েছিল, তিনি খানিক ‘নমনীয়’ হয়েছেন। কিন্তু বিকেলের মিছিলে না–গিয়ে আবার অসন্তোষের বার্তাই দিলেন বলে মনে করছে বিজেপি-র একাংশ।