প্রতীকী ছবি।
করোনার সংক্রমণ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে সাবধানে থাকার পরামর্শ বরাবরই দিয়ে আসছেন চিকিৎসকেরা। আগামী ৩০ অগস্ট, ইসলামি বছরের প্রথম মাস মহরমের ১০ তারিখ শোকপালনের দিন। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ওই দিনটিতে বাড়িতে বসেই প্রার্থনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা মহরম মাসের ১০ তারিখে ‘আশুরা’ পালন করে থাকেন। ‘আশুরা’ শব্দটি ‘আশরা’ শব্দের অপভ্রংশ। আরবিতে ‘আশরা’ শব্দটির অর্থ দশ। মহরমের দিনে শোক পালনের অর্থ হিজরি ৬১ অব্দে ১০ মহরমের দিন হজরত মহম্মদ (সাঃ)-এর আদরের নাতি হজরত হুসেন তাঁর পরিবার ও অনুগামী-সহ ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শহিদ হয়েছিলেন। সেই নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে হুসেনের ছয় মাসের শিশুপুত্র আলি আসগরও রেহাই পাননি।
করোনার কথা মাথায় রেখে এ বার এই বিশেষ দিনটিতে বাড়িতে বসেই প্রার্থনা করে শোকপালনের আর্জি জানাচ্ছেন নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাসেমি। তাঁর কথায়, “শহরবাসী তথা রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ, মহরম উপলক্ষে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। মহরম শোকের মাস। এই সময়ে আনন্দের কোনও জায়গাই নেই। সাধারণ মুসলিমদের কাছে আমার বিনীত আবেদন, ওই দিন বাড়িতে বসেই প্রার্থনা করুন।” ফুরফুরা দরগা শরিফের তরফে ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, “বাংলার মুসলিমদের কাছে হাতজোড় করে বলছি, এ বারের করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মহরমের শোকের দিনে বাড়িতে বসেই প্রার্থনা করুন।”
করোনা অতিমারির কথা মাথায় রেখে মহরম উপলক্ষে হুগলির ফুরফুরা দরগা শরিফে দু’দিনের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওয়াকফ বোর্ডের তরফে রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশ হাজার মসজিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়াকফ সম্পত্তির আওতায় থাকা মাজার কমিটিকে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনি। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারি বিধি মেনে মহরম উপলক্ষে একসঙ্গে ২৫ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাধারণ মুসলিমেরা যাতে বাড়িতে থেকেই প্রার্থনা করেন, সে বিষয়ে মসজিদের ইমামদের নিজের নিজের পাড়ায় সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে বলা হয়েছে।”
রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য তথা শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মেহের আব্বাস রিজভি বলেন, “কলকাতায় এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ঘটা করে মহরম পালন করা ঠিক নয়। সরকারি বিধি মেনে চলুন।” নাখোদা মসজিদের কো-ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিমের আবেদন, “ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, মহরমের দিনে গরিব মানুষকে সাহায্য করলে পুণ্য অর্জনের কথা বলা আছে। এখনও লকডাউন, করোনার কারণে বহু মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। সাধারণ মুসলিমদের কাছে আমাদের আবেদন, নির্দিষ্ট দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে দুঃস্থদের হাতে খাবার তুলে দিন।”
এই কঠিন পরিস্থিতিতে মহরম উপলক্ষে শহরের রাস্তা বন্ধ করে কোনও রকম সমারোহের ঘোরতর বিরোধী টিপু সুলতান মসজিদের কো-ট্রাস্টি তথা টিপু সুলতানের প্রপৌত্র শাহিদ আলম এবং টিপু সুলতান মসজিদের হাফিজ মহম্মদ হারুন রসিদ। তাঁদের কথায়, “দেশের স্বার্থে মহরমের দিনে সমস্ত মুসলিমেরা ঘরে থাকুন। হাতজোড় করে এটাই বলতে চাই।” রেড রোডে ইদের নমাজের ইমাম ফজলুর রহমান, “মহরমের শোক দিবসে বাড়িতে থেকে রোজা পালন করুন। নমাজ পড়ুন। কোনও ভাবেই বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।”