জাতীয় পরিবেশ আদালত।
পরিবেশের মানের অবনমন আসলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও দায়িত্ব পালনে অনীহাই প্রমাণ করে। একই সঙ্গে গাফিলতির কারণে যদি পরিবেশগত কোনও ক্ষতি হয়, তার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। এর আগে এই মামলাতেই সরকারের উপরে আর্থিক জরিমানা ধার্য করেছিল আদালত। তার পরেও আদালতের এই মন্তব্যকে যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। আদালত এ-ও জানিয়েছে, পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টির সঙ্গে কখনওই কোনও আপস করা উচিত নয়। এবং এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সাল থেকে এই মামলা চলে আসছে। মামলায় বিভিন্ন সময়ে কখনও বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, কখনও পুরনো যানবাহনের গাড়ির ধোঁয়া, কখনও ধাপায় দীর্ঘদিন ধরে স্তূপীকৃত জঞ্জাল (লেগ্যাসি ওয়েস্ট)-সহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সে সংক্রান্ত হলফনামা, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেওয়া, পরিবেশ আদালতের নির্দেশে কমিটি গঠন করা, দূষণের উৎস খোঁজার জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে নিয়োগ, সবই হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বায়ু দূষণের মাত্রা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারণ, সব ক’টি ক্ষেত্রেই সরকারের তরফে ‘গাফিলতি’ রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। যাবতীয় নির্দেশিকা, অ্যাকশন প্ল্যান, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট, সব কিছুই শুধুমাত্র খাতায়-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি বলেই মত তাঁদের। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘কাগজে-কলমে অনেক সিদ্ধান্ত হয়তো নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে বায়ুদূষণ কমেনি।’’ আর এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কিন্তু রাজ্য সরকারের আর্থিক জরিমানাও হয়েছে অতীতে! তার পরেও এ বিষয়ে খামতি থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ নিজেদের নির্দেশে সে কারণে পরিবেশ আদালতও জানিয়েছে, ‘পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের জন্য সরকারের তরফে তেমন কোনও প্রচেষ্টাই নজরে পড়েনি’।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফে যে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ জমা দেওয়া হয়েছে, তা যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত করা হয়, তা-ও সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বাস্তবে কতটা কী করা হল, সে সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট আগামী ছ’মাসের মধ্যে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘পরিবেশ, বায়ুদূষণ নিয়ে যে তারা বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়, তা রাজ্য সরকার প্রতিটা পদক্ষেপে প্রমাণ করে দিয়েছে। না হলে আর্থিক জরিমানার পরেও এতটা গা-ছাড়া মনোভাব থাকতে পারে না।’’ রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালত যা যা নির্দেশ দিয়েছে, সরকারের তরফে তার সবটাই বাস্তবায়িত করা হবে।’’