NITI AAYOG

আর্থিক স্বাস্থ্য ভাল নয় পশ্চিমবঙ্গের, বলছে নীতি আয়োগের রিপোর্ট

নীতি আয়োগের মতে, পশ্চিমবঙ্গকে অবিলম্বে পরিকাঠামো তৈরি-সহ মূলধনী খাতে খরচে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিজের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৮
Share:

নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের মোট খরচের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচের হার ২০২২-২৩-এ ৩%-এ নেমে এসেছে। —ফাইল চিত্র।

আর্থিক স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে শেষ সারিতে থাকা রাজ্যগুলির তালিকায়, জানিয়েছে নীতি আয়োগ।

Advertisement

নীতি আয়োগের মতে, পশ্চিমবঙ্গকে অবিলম্বে পরিকাঠামো তৈরি-সহ মূলধনী খাতে খরচে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিজের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কর বাবদ আয় এবং কর ছাড়া অন্যান্য আয়— দুই ক্ষেত্রেই। একই সঙ্গে কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে।

দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে কার রাজকোষের অবস্থা ২০২২-২৩-এ কেমন ছিল, তা নিয়ে আজ নীতি আয়োগ ‘রাজকোষের স্বাস্থ্য সূচক’ প্রকাশ করেছে। রাজকোষের স্বাস্থ্যের মাপকাঠিতে মোট ১৮টি রাজ্যকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে রয়েছে ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, ঝাড়খণ্ড ও গুজরাত। চতুর্থ বা সব থেকে খারাপদের শ্রেণিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব। নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই শেষ সারির রাজ্যগুলি রাজকোষ ঘাটতি ও রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হিমশিম খাচ্ছে। রাজ্যের নিজস্ব আয় খুবই কম। দেনার বোঝা ক্রমশ বাড়ছে। সেই দেনা শোধ করার ক্ষমতা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তুলনায় সামনের সারিতে থাকা রাজ্যগুলি পরিকাঠামো তৈরিতে রাজ্যের জিডিপি-র প্রায় ৪% খরচ করছে। কর ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয় বাড়াচ্ছে। উদ্বৃত্ত রাজস্ব থাকছে। রাজস্ব আয়ের সামান্য অংশ ঋণের সুদ মেটাতে খরচ হচ্ছে তাদের।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা কেমন? নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের মোট খরচের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচের হার ২০২২-২৩-এ ৩%-এ নেমে এসেছে। যা জাতীয় গড়ের থেকে কম। ২০১৮-১৯-এও ৫%-এর বেশি ব্যয় হত। মূলধনী খাতেও খরচের ভাগ কমেছে। তা-ও জাতীয় গড়ের থেকে কম। সেই তুলনায় সামাজিক খাতে খরচের হার বেশি ঠিকই, কিন্তু তা-ও জাতীয় গড়ের থেকে কম।

রাজ্যের আয়ের মূল উৎস জিএসটি-তে রাজ্যের ভাগ। গত পাঁচ বছর ধরে তা বাড়ছে। কিন্তু কর বাদে অন্য উৎস থেকে আয় পাঁচ বছর ধরে কমছে। অনুদানের উপরে নির্ভরশীলতা বেড়েছে। আর্থিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে রাজস্ব ঘাটতি ওঠানামা করছে। রাজকোষ ঘাটতি সামান্য কমলেও তা ৩%-এর উপরে। রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় দেনার হার ২০১০-১১-এ ছিল ৪০.৭%। তা ২০১৮-১৯-এ কমে ৩৫.৭% হলেও ২০২০-২১-এ তা বেড়ে ৪২.৬%-এ চলে গিয়েছিল। ২০২২-২৩-এ তা কিছুটা কমে ৩৮.২%-এ নেমে এসেছে। কিন্তু রাজস্ব আয়ের ২০%-এর বেশি অর্থ পুরনো ঋণে সুদ মেটাতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের জন্য খরচে টান পড়ছে, বক্তব্য নীতি আয়োগের।

নীতি আয়োগের রিপোর্ট প্রকাশ করে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগাড়িয়া বলেন, ‘‘এই বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা দরকার।’’ ষোড়শ অর্থ কমিশনই ঠিক করবে, ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রের কর বাবদ আয়ের কতখানি অংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। এখন কেন্দ্রের কর বাবদ আয়ের ৪১% রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দাবি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় করের ৫০% রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক। কিন্তু নীতি আয়োগের কর্তাদের মতে, আর্থিক অনুদান পাইয়ে দেওয়ার বদলে রাজ্যগুলিকে সঠিক পথে চালিত করা জরুরি। খয়রাতির বদলে পরিকাঠামো তৈরিতে নজর দিতে হবে। আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে বা আয় বুঝে ব্যয় করতে হবে। এখানেই পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে।

এক নজরে

রাজ্য সরকারের আর্থিক স্বাস্থ্যের সূচক-নীতি আয়োগের রিপোর্ট রাজকোষের স্বাস্থ্যের সূচকে শেষ সারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গকে পরিকাঠামো তৈরি-সহ মূলধনী খাতে খরচে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজ্যের মোট খরচের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচের হার ২০২২-২৩-এ ৩%, জাতীয় গড়ের থেকে কম।

রাজ্যকে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। কর বাদে অন্য উৎস থেকে আয় পাঁচ বছর ধরে কমছে। অনুদানের উপরে রাজ্যের নির্ভরশীলতা বেড়েছে

সামাজিক খাতে খরচ তুলনায় বেশি হলেও তা জাতীয় গড়ের থেকে কম

রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় দেনার হার ৩৮.২%, পুরনো ঋণে সুদ মেটাতে রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে, টান পড়ছে উন্নয়নের খরচে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement