সকাল থেকে আকাশ বেশ মেঘলা করে থাকছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কেটে জ্বালা ধরানো রোদে প্রাণাম্তকর অবস্থা। আবার রাতের দিকে অনেক সময়েই বৃষ্টি নামব-নামব করেও আর নামছে না। একটা দমকা হাওয়াতেই উড়ে যাচ্ছে একটু স্বস্তির যাবতীয় সম্ভাবনা।
এমতাবস্থায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই বর্ষার খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, নিয়মমতোই ১ জুন কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষা ঢোকার কথা। এ বােরও সে নির্ঘণ্ট হয়তো বজায় থাকবে। কিন্তু তার পরে বর্ষার গতি-প্রকৃতি কী হবে, সে সম্পর্কে আবহবিদেরা নিশ্চিত নন। কেন?
ওঁরা আঙুল তুলছেন সেই এল নিনোর দিকেই। ‘‘গত বছরের মতো এ বছরেও ভারতে স্বাভাবিক বর্ষায় প্রভাব ফেলতে পারে এল নিনো।’’— বলছেন নয়াদিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিদ। ওঁরা জানাচ্ছেন, গত বছর এল নিনোর ধাক্কায় দেশে বর্ষার প্রথম দফাটা ভাল যায়নি। এল নিনো দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরে, অগস্ট থেকে বৃষ্টি নামলেও জুন-জুলাইয়ের ঘাটতি শেষমেশ সবটা মেটেনি। গত মরসুমে ১১% ঘাটতি নিয়েই দাঁড়ি পড়েছে বর্ষার ইনিংসে।
এল নিনো জিনিসটা কী?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা: প্রশান্ত মহাসাগরের জলতলের উষ্ণতা বেশ কিছু দিন ধরে সেখানকার গড় তাপমাত্রার তুলনায় বেশি থাকলে সেই প্রাকৃতিক অবস্থাকে ভূগোলের ভাষায় এল নিনো নামে অভিহিত করা হয়। যার জেরে বঙ্গোপসাগর-আরবসাগরে নিম্নচাপ গঠনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, ফলে গতি হারায় বর্ষা। তাই এল নিনোর উপস্থিতি ধরা পড়লেই মৌসম ভবন প্রমাদ গোনে।
এ বারের পরিস্থিতিটা কি?
মৌসম ভবন জানিয়েছে, গত বারের মতো এ বারেও বর্ষার গোড়ায় এল নিনো ভাল রকম শক্তি নিয়ে হাজির থাকতে পারে। জুনের প্রথম থেকে জুলাই পর্যন্ত এল নিনো কী অবস্থায় থাকে, তার ভিত্তিতে বর্ষার পরবর্তী পূর্বাভাস দেওয়া হবে। ‘‘মার্কিন পরিবেশ পূর্বাভাস কেন্দ্র (সিপিসি) এবং অস্ট্রেলীয় আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের হিসেবে, মে-জুনে এখানে এল নিনোর ৫০%-৬০% প্রভাব থাকার সম্ভাবনা।’’— বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।
মার্কিন এবং অস্ট্রেলীয় আবহবিদদের অনুমান মিলে গেলে বর্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকবে, মৌসম ভবন তা জানাতে দ্বিধা করছে না।