অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে অনেক বাংলো। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছর ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কিন্তু বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে কেনা বাংলোয় নিজেরাই থাকার অধিকার পাননি তাঁরা।
অভিযোগ, রাজ্য সরকারের গড়া বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন বাংলোর ‘মিউটেশন’ বা নামজারি করার কথা বললেও রাজ্যেরই ভূমি দফতর সেই নির্দেশ মানছে না। হাত গুটিয়ে রেখেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অবশেষে বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ন’জন বাংলো-মালিক।
অচিন বসু নামে মৌলালির এক ব্যবসায়ী ওই ন’জনের অন্যতম। তিনি জানান, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের কিছু আগে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেন্সে বাংলো বুক করেন তিনি। অচিনবাবুর কথায়, ‘‘১০ বিঘা জমির উপরে ৪৫টি দোতলা বাংলো। আড়াই কাঠা জমির উপরে এক-একটি বাংলোয় তিনটি ঘর। সব বাংলো এক রকম দেখতে। আমাদের নকশা দেখিয়ে বলা হয়েছিল, কাছেই জোকা থেকে খুব তাড়াতাড়ি মেট্রো চালু হবে।’’
২০ লক্ষ টাকার সেই বাংলো কিনতে অচিনবাবুর মতো আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। স্বয়ং সুদীপ্তের সঙ্গে চুক্তি হয়। বাংলোর দামের ৫০ শতাংশ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন সুদীপ্ত। অচিনবাবু বলেন, ‘‘২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৭ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিয়েছিলাম। তার পরে সুদীপ্তবাবু গ্রেফতার হন।’’ সারদায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গড়ে দেয়। বাংলো চেয়ে অচিনবাবুরা সেই কমিশনের দ্বারস্থ হলে বলা হয়, বকেয়া টাকা দিলে বাংলো পাওয়া যাবে।
অচিনবাবুদের হয়ে বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে এই মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলো পাওয়ার আশায় অচিনবাবুরা সেই টাকাও মিটিয়ে দেন। কমিশনের নির্দেশে সেই বাংলো রেজিস্ট্রেশনও হয়ে যায়। সেটা ২০১৪ সাল। বিষ্ণুপুরের ভূমি দফতরকে কমিশন নির্দেশ দেয়, ওই জমির মিউটেশন মালিকের নামে করে দিতে হবে। কিন্তু কেবলই ঘোরানো হচ্ছে তাঁদের।’’
অচিনবাবু জানান, ভূমি দফতরের তরফে বলা হয়, ‘সারদা নিয়ে মামলা চলছে। এই অবস্থায় জমির মিউটেশন করানো যাবে না। আপনারা ইডি-র কাছ থেকে ‘নো-অবজেকশন’ সার্টিফিকেট বা অনাপত্তি শংসাপত্র নিয়ে আসুন।’ যদিও ভূমি দফতরের কর্তা এ কথা লিখিত ভাবে জানাননি। অচিনবাবুরা ইডি-র কাছে গেলে বলা হয়, ‘জমির মিটেশন করা যাবে না’— এমন কোনও নির্দেশ তারা দেয়নি। তাই তাদের পক্ষে অনাপত্তি শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।
বিপ্লববাবুর কথায়, ‘‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করে সম্প্রতি বলা হয়েছে, মামলা চলাকালীন বিতর্কিত সম্পত্তির আসল দাবিদার এলে তাঁর হাতে সম্পত্তি তুলে দিতে হবে। এই সংশোধনীর ভিত্তিতেই মিউটেশনের জন্য আদালতে আবেদন করা হচ্ছে। এই নিয়ে ইডি ও রাজ্যের ভূমি দফতরকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানানো হচ্ছে।’’
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইডি-কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি। জেলার ভূমি দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আগে কিছু বলা যাবে না।