শহর জুড়ে বৃষ্টির দাপটে জমেছে জল। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই মেঘলা ছিল আকাশ। কিন্তু, শুক্রবার বিকেলে আচমকাই ঝেঁপে বৃষ্টি নামল কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। সঙ্গে প্রবল বজ্রপাত। বাজ পড়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে চার জনের। তাঁদের মধ্যে তিন জন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। অন্য দিকে, কলকাতায় ভিক্টোরিয়ার সামনে বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন এক ব্যক্তি। একইসঙ্গে রিজেন্ট পার্ক এলাকার এক বাসিন্দা বাজের শব্দ-আলোয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
এ দিন বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ কলকাতায় শুরু হয় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ তুমুল বৃষ্টি। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দক্ষিণ দিকের গেটের কাছে সপরিবারে দাঁড়িয়ে ছিলেন দমদমের বাসিন্দা সুবীর পাল। সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই চত্বরে বাজ পড়ে। জখম অবস্থায় তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকেরা বছর পঁয়ত্রিশের সুবীর পালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর স্ত্রী এবং শিশুকন্যা-সহ অন্তত ১৬ জন জখম অবস্থায় ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরেও বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন রিনা বাউরি (২০), রিঙ্কু বাউরি (২৫) এবং রঞ্জিত বাউরি (৩০) নামের তিন জন। আহত হয়েছেন আরও তিন। তাঁরা সকলেই বৃষ্টির মধ্যে মাঠে কাজ করছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই সময় আচমকাই মাঠে বাজ পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বান্দা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিন জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।
মুষলধারায় বৃষ্টি শহর জুড়ে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক এলাকার বাসিন্দা অপর্ণা মণ্ডল বৃষ্টির সময় বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় কাছের কোনও জায়গায় বাজ পড়ে। বাজের প্রবল আওয়াজ এবং আলোয় হার্ট অ্যাটাক হয় বছর বাহান্নর অপর্ণা দেবীর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তত ক্ষণে মারা গিয়েছেন তিনি।
ঘূর্ণাবর্তের জেরে এ দিনের প্রবল বৃষ্টিতে জল জমে যায় শহরের বেশির ভাগ জায়গায়। জলমগ্ন হয়ে প্রবল যানজট তৈরি হয় সাহাপুর রোড, আলিপুর রোড, এজেসি বোস রোড, হাইড রোড, পার্ক স্ট্রিট, শরৎ বসু রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এম জি রোড-সহ বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তায়। কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছে না, হচ্ছে না, কিন্তু যখন হচ্ছে, তখন তার তীব্রতা অনেক বেশি হচ্ছে। আমাদের পাম্পিং মেশিনগুলো যতটা জল বার করতে পারে, তার থেকে বেশিই বৃষ্টি হচ্ছে। এখন জোয়ার চলছে। ভাটার অপেক্ষা করতে হবে। এমন বৃষ্টি আর না হলে আগামী কালের মধ্যেই সবটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’
এ দিন সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টির তীব্রতা কমলেও আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকায় একটি ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে। তার জেরেই উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে।
আরও পড়ুন: সব চেষ্টাই ব্যর্থ, রোজভ্যালি-কাণ্ডে হাজিরা দিতে এলেন রাজীব কুমার
আরও পড়ুুন: জাগো বাংলায় সারদার টাকা! তলব পেয়ে সিবিআই দফতরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়
আরও পড়ুন: অনেক গ্রন্থাগারই ধুঁকছে, তৃণমূলে প্রশ্ন পুরস্কার নিয়ে
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটারের বেশিও বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এই সময় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, “ঘূর্ণাবর্তের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টি হবে। তবে নিম্নচাপ দানা বাঁধার সম্ভাবনা কম। এই সময় কলকাতা-সহ উপকূলের জেলাগুলিতে ভালই বৃষ্টি হবে।”