নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) সোমনাথ ঘোষ, সন্দীপ চক্রবর্তী, সঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং জয়দীপ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
রাষ্ট্রদূতদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা ছিল, দেশের যে কোনও রাজ্য বেছে নিয়ে বিশ্বের বাজারে তুলে ধরতে হবে। সেখানকার জন্য টানতে হবে লগ্নি। সেই কথা মেনেই সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে গেলেন পাঁচ রাষ্ট্রদূত। তাঁদের চার জনই বঙ্গসন্তান। ফলে জন্মভিটের টান বাড়তি তাগিদ হয়ে দেখা দিয়েছে তাঁদের কাছে। তিন দিন এ রাজ্যে কাটিয়ে শনিবার তাঁরা ফিরে গিয়েছেন ভিন দেশে, নিজেদের কর্মস্থলে। যাওয়ার আগে জানালেন, লক্ষ্য এখন বাংলার জন্য কিছু করা।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ চেয়েছিলেন, বিদেশেই থাকতে হয় যে রাষ্ট্রদূতদের, দেশের পরিস্থিতিও সরেজমিনে বুঝুন তাঁরা। নয়াদিল্লিতে ২৭-৩১ মে রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে যোগ দিতে আসার আগেই বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর তাঁদের জানিয়ে দেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রদূতকে দেশের কোনও একটি রাজ্যে যেতে হবে। কর্মস্থলে ফিরে সেই রাজ্যে লগ্নি টানার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে সাত জন পশ্চিমবঙ্গকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। এঁদের চার জনই বাঙালি। ভুটানে জয়দীপ সরকার, মিশরে সঞ্জয় ভট্টাচার্য, মঙ্গোলিয়ায় সোমনাথ ঘোষ এবং পেরু ও নিকারাগুয়াতে সন্দীপ চক্রবর্তী বঙ্গ-সফরের সিদ্ধান্ত জানান বিদেশ মন্ত্রককে। পাকিস্তানের হাই কমিশনার গৌতম বাম্বাওয়ালে এবং বাংলাদেশের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন সিংলার এই দফায় আসার ইচ্ছা থাকলেও বিশেষ কাজে আটকে পড়ায় তা হয়নি। তবে এসেছিলেন সুরিনামে ভারতের রাষ্ট্রদূত সতীন্দ্র কুমার। ১-৩ জুন কলকাতা, হলদিয়া, ফলতা সফর করে রাজ্যের আকর্ষণ-বিন্দুগুলি বুঝে নেন তাঁরা।
পেরুর রাষ্ট্রদূত সন্দীপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র মাধ্যমে এ দেশে বিনিয়োগ টানতে চান। সেই আদলেই ‘মেক ইন বেঙ্গল’-কে সামনে রেখে কাজ করব। বাঙালি হিসেবে রাজ্যের জন্য যথাসাধ্য করব বলে মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছি।’’
এই সফরে কূটনীতিকরা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সচিবদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে জেনেছেন রাজ্যের শক্তি ও দুর্বলতা। তাঁরা হলদিয়ায় গিয়ে পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা ঘুরে দেখেন। যান ফলতা বিশেষ রফতানি অঞ্চলেও। অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র রাষ্ট্রদূতদের সামনে রাজ্যের আর্থিক ও শিল্প পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, লগ্নি বা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে যে কোনও সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য রাজ্য তৈরি। রাষ্ট্রদূতেরা প্রস্তাব দিলে তিনি নিজে তা বাস্তবায়নের ‘সিঙ্গল উইন্ডো’ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করবেন।
বৃহস্পতিবার কূটনীতিকরা নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। কিছু প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়। সন্দীপ চক্রবর্তী মমতাকে জানান, সেখানে সোনা রফতানির কারবার বেশ বড়। আর এ রাজ্যে অলঙ্কার তৈরির নিপুণ কারিগর অনেক। তাই পেরুর সোনা কারবারিদের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি যোগাযোগ হলে এখানকার স্বর্ণশিল্পের সুবিধা হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাবটি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
সঞ্জয় ভট্টাচার্য এ রাজ্যে মিশরের কার্পেট কারখানা করার কোনও সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রদূত সোমনাথ ঘোষ সেখানকার কোল-ওয়াশারি প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখানকার যোগসূত্র ঘটানোর কথা জানিয়েছেন। ভুটানের রাষ্ট্রদূত জয়দীপ সরকার সে দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
এক রাষ্ট্রদূতের মতে, বাঙালি গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। লগ্নি টানতে তাঁরা অনেকেই অনুঘটকের কাজ করতে পারেন। বাংলাকে কাছ থেকে দেখে গিয়ে সেই বার্তাই তাঁরা প্রচার করবেন।