পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত না হওয়া টোটোর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালিয়ে সেগুলি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করতে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, সব আইন মানার পরে টোটোর নথিভুক্তকরণ করবে রাজ্য পরিবহণ দফতরই, পুরসভা নয়। পাশাপাশি, পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে পুরসভা কী ভাবে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে, সেই প্রশ্নও তুলেছে আদালত।
গত এপ্রিলে পরিবহণ দফতর বিভিন্ন জেলার ‘রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’-কে টোটো নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে হাওড়া-সহ কিছু পুরসভার কর্তৃপক্ষ টোটো নথিভুক্ত করছে, এই অভিযোগে জনস্বার্থে মামলা করেন হাইকোর্টের আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার।
তিনি আবেদনে জানান, দূষণহীন এই যান জনপ্রিয় হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবহণ আইনে কিছু সংশোধনী আনে। সেই অনুযায়ী রাজ্য পরিবহণ দফতরও চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি জারি করে টোটো চলার ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা স্পষ্ট করে দেয়।
কেন্দ্রীয় আইনের ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, টোটোতে চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। ৪০ কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না। পাশাপাশি, চালককে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং তাঁকে লাইসেন্স নিতে হবে টোটো প্রস্তুতকারক সংস্থা বা নথিভুক্ত কোনও সংগঠনের থেকে। শুধু তাই নয়, পরিবহণ দফতরের থেকে টোটোকে নিয়মিত ‘সার্টিফিকেট অব ফিটনেস’ নিতে হবে। সব নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা যাচাই করেই পরিবহণ দফতর টোটোকে নথিভুক্ত করবে।
রমাপ্রসাদবাবুর অভিযোগ, হাওড়া-সহ বেশ কিছু পুর-এলাকায় এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। তিনি আদালতে আরও অভিযোগ করেন, নিয়মানুযায়ী, ভাড়া গাড়ির রুট ঠিক করে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু ডোমজুড়, আন্দুল, মাকড়দহ, ঊনসানি-সহ বিভিন্ন এলাকায় মোটা টাকার বিনিময়ে টোটোর রুট ঠিক করে দিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। কী ভাবে রুট ঠিক করা হচ্ছে, সেই নথিও আদালতে পেশ করেন তিনি।
সরকারি কৌঁসুলি তপন মুখোপাধ্যায়ও আদালতে জানান, হাওড়া পুরসভা দফায় দফায় টোটো নথিভুক্ত করছে। তা শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। পরিবহণ দফতরের বিজ্ঞপ্তি পড়ে প্রধান বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘পুরসভা কি কেন্দ্রীয় আইনের ঊর্ধ্বে? তারা কি সমান্তরাল প্র শাসন চালাতে পারে?’’
এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, পরিবহণ দফতরে নথিভুক্ত না হওয়া টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সেগুলি বাজেয়াপ্ত করতে হবে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরকে। রাজ্যের জিপি অভ্রতোষ মজুমদারও আদালতে বলেন, ‘‘নথিভুক্ত না হওয়া টোটো চলা উচিত নয়।’’ এ দিকে, পুরসভাগুলির এক্তিনার নিয়ে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, পুরসভাগুলি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তাদের কাজের নিজস্ব এক্তিয়ারও আছে।’’ পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আদালত যদি আমাদের হলফনামা দিতে বলে, তা হলে আমরা সেখানে সব জানিয়ে দিতে পারি।’’