বিতর্কের জেরে তিন ভাষাতেই সমান মাপের অক্ষরে লেখা হল নাম। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা মেট্রোর নবতম স্টেশন হিসেবে সংযোজিত হতে চলা বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বরের নামের ফলকে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সংবাদ সামনে আসার পরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। এর পরেই ফলক বদল করলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নতুন বসানো ফলকে যথাক্রমে বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে স্টেশনের নাম সমান মাপের হরফে লেখা হয়েছে বলেই খবর।
অভিযোগ উঠেছিল, ওই দুই মেট্রো স্টেশনের নাম আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্মে গন্তব্য হিসেবে বসানো ফলকে হিন্দিতে বড় মাপের অক্ষরে লেখা হয়েছে। কিন্তু তার তুলনায় অর্ধেক মাপের অক্ষরে বাংলা ও ইংরেজিতে নামগুলি লেখা। দু’টি মেট্রো স্টেশনের আপ এবং ডাউন প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে আটটি বোর্ডে ওই রীতিই অনুসরণ করা হয়েছিল। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে সমালোচনায় সরব হন একাধিক রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্য এবং সাধারণ মানুষ। বিতর্ক বাড়তেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, স্টেশনের ওই সজ্জা চূড়ান্ত নয়। কোথাও কোনও অভিযোগের পরিস্থিতি তৈরি হলে তা নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত প্রায় মাস দেড়েক ধরে ওই মেট্রোপথের এবং নতুন দু’টি স্টেশনের খুঁটিনাটি প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। তখনই বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের নামের আগের ফলক বদল করা হয়েছে। নানা ভাষা এবং সংস্কৃতির দেশ ভারতে স্টেশনের সাজসজ্জা ও নামের ফলক বসানোর ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার চল বহু দিনের। শেষ পর্যন্ত ওই ফলক বদলের সংবাদে খুশি রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। এমনই একটি সংগঠনের সদস্য অর্কপল সরকার বলেন, “আঞ্চলিক বৈশিষ্ট ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়া যেমন রেলের রীতি, তেমনই আঞ্চলিক ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে স্বাগত জানাচ্ছি।” একটি রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য কৌস্তুভ চৌধুরী বলেন, “ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি কোনও দিনই সমর্থন করি না। এ নিয়ে জোর জবরদস্তি করা উচিত নয়। সেটা মেট্রো কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারায় ভাল লাগছে।”
সপ্তাহখানেকের মধ্যেই যাত্রী পরিবহণের জন্য নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোপথ খুলে দেওয়া হতে পারে বলে খবর। কারণ, বাণিজ্যিক ভাবে যাত্রী পরিষেবা শুরু করার জন্য বুধবার সন্ধ্যায় রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মেট্রো ভবনে এসে পৌঁছেও গিয়েছে। এর পরেই কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য রেল বোর্ডের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এক মেট্রোকর্তা বলেন, “আমাদের দিক থেকে যাবতীয় প্রস্তুতির কথা রেল বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ বার তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালে সেই মতো পরিষেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।” এ দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আবহে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোপথের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসতে পারেন বলে খবর। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এ রাজ্যে তাঁর কর্মসূচিও রয়েছে। ফলে, ওই দিন নতুন মেট্রোপথের উদ্বোধন হতে পারে বলে অনুমান কর্তাদের। তবে এখনও নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হয়নি। রেল বোর্ডের সম্মতি পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।