বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত মফিজউদ্দিনের নতুন বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
সদ্য সাদা রঙ করা দেওয়ালে আড়াআড়ি ফাটল। রঙ চটে বেরিয়ে পড়েছে সিমেন্টের আস্তরণ। মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের টুকরো। আসবাবের ভাঙা অংশ। জানলার কাচ। এই বাড়িতে মাত্র ১৫ দিন আগে গৃহপ্রবেশ হয়েছিল মফিজউদ্দিনের। রবিবার দত্তপুকুরের মোচপোলের বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণের আঁচ পড়েছে উল্টো দিকের এই বাড়িতেও। রাতে কোথায় রান্না করবেন, সেটাই এখন বড় চিন্তা রাজমিস্ত্রি মফিজউদ্দিনের।
সাধ করে বানানো বাড়িটা সবে সাজাতে-গোছাতে শুরু করেছিলেন মফিজউদ্দিন। এখনও টুকটাক কাজ বাকি। ইচ্ছা ছিল, ধীরে ধীরে বাকি কাজ শেষ করবেন। রবিবার সেই ইচ্ছাতেই ফাটল ধরল। বাজি কারখানার বিস্ফোরণের তীব্রতায় তাঁর বাড়ির দেওয়ালে চিড় ধরেছে। হেলে গিয়েছে বারান্দা। রান্নাঘরের অবস্থাও ততোধিক করুণ। দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে হাঁড়ি, কড়াই। রাতে কোথায় রান্না হবে, ভেবেই মাথায় হাত মফিজউদ্দিনের।
দিন কয়েক আগেই মফিজউদ্দিনরা সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলেন শোওয়ার ঘরটা। রেখেছিলেন খাট, আলমারি-সহ নানা আসবাব। রবিবারের বিস্ফোরণে ভেঙে গিয়েছে খাট। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে আসবাব। একটা জানলার কাচও আস্ত নেই। কষ্টের সঞ্চয়ে তৈরি বাড়ির পরিণতি দেখে ভেঙে পড়েছেন মফিজউদ্দিনের স্ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর প্রশ্ন একটাই, ‘‘অন্যের কারণে আমাদের কষ্টের বাড়ির এই অবস্থা। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?’’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সামসুল আলির বাড়িতে চলতে বেআইনি বাজি তৈরির কাজ। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ধুলোয় মিশেছে সেই বাড়ি। এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন সামসুল-সহ সাত জন। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আট জনের। তাঁরা হলেন, ২০ বছরের রেশমা খাতুন, ১৭ বছরের মাসুমা খাতুন, ৪০ বছরের আশুরা বিবি, সারিনা বিবি, ১৪ বছরের সানাউল আলি, ৫০ বছরের শমসের আলি, ৫২ বছরের সাইদুল আলি। আহতদের মধ্যে একটি ৮ বছরের বালকও রয়েছে। শুধু সামসুলের বাড়ি নয়, বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে আশপাশের বাড়িও। সেখানে আহত হয়েছে এক মহিলা। বিস্ফোরণস্থল থেকে ২০০ ফুট দূরের বাড়িতেও ভেঙে গিয়েছে টালির চাল। বাড়ির বাসিন্দা আরিফা বিবি জানিয়েছেন, টালি ফেটে তাঁদের উঠোনে এসে পড়েছে একটি হাত। পুলিশ এসে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে সেই হাত।