অরুণালোক চক্রবর্তী। ছবি সংগৃহীত।
অতিমারি পরিস্থিতিতে কোভিডের পাশাপাশি মানুষকে উদ্বেগে রেখেছে মিউকরমাইকোসিস নামে একটি ছত্রাকবাহিত রোগও। চিকিৎসকদের মতে, সেই রোগ সৃষ্টিকারী একটি নতুন প্রজাতির ছত্রাকের সন্ধান পেয়েছেন এক দল ভারতীয় বিজ্ঞানী। কানিংহামেল্লা গোত্রের সেই ছত্রাকের নতুন প্রজাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাঙালি চিকিৎসক ও ছত্রাকবিদ অরুণালোক চক্রবর্তীর নামে। গবেষকেরা জানান, ‘কানিংহামেল্লা অরুণালোকেই’ নামে এই নতুন প্রজাতির ছত্রাক সুস্থ মানুষের দেহেও বাসা বেঁধে মিউকরমাইকোসিস রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই গবেষণাপত্রটি ‘জার্নাল অব ফাঙ্গি’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা জানান, এক যুবক ভুবনেশ্বরের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এমস)-এ চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তাঁর নাকের ভিতরে সাইনাসে এবং ত্বকে বার বার সংক্রমণ হচ্ছিল। পরীক্ষা করে তাঁর দেহে মিউকরমাইকোসিস ধরা পড়ে এবং এই গবেষণার শুরু সেখান থেকেই। একাধিক বার অস্ত্রোপচার করেও তাঁর রোগ সারেনি। বরং বার বার ফিরে এসেছে। ওই যুবকের দেহে থাকা ছত্রাক পরীক্ষা করে কানিংহামেল্লা গোত্রের নতুন প্রজাতির ছত্রাকের সন্ধান পাওয়া যায় এবং দেখা যায়, দেহে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলেও এই ছত্রাক সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
গবেষকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখেন, এত দিন কানিংহামেল্লা গোত্রের যে-সব প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে, ওই যুবকের দেহে থাকা ছত্রাকটি তাদের থেকে আলাদা। ফলে এটি যে একটি নতুন প্রজাতি, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হন তাঁরা এবং তার পরেই দেশের ছত্রাক সংক্রান্ত গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ অরুণালোকবাবুর নামেই প্রজাতিটিকে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রবীণ চিকিৎসক এবং ছত্রাক-বিজ্ঞানী অরুণালোকবাবু এখন চণ্ডীগড়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিজিআই)-এ মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহলের খবর, ছত্রাকবাহিত রোগ এবং এপিডেমিয়োলজি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে এই চিকিৎসকের সবিস্তার গবেষণা রয়েছে। ছত্রাকবাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক স্তরে সমাদৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ছত্রাকবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এই বাঙালি চিকিৎসক-গবেষক ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর চোখের সংক্রমণ এবং নাকের সংক্রমণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সেরও সদস্য।