প্রতীকী ছবি।
বিভিন্ন কারণে এ দেশে ঢুকে ধরা পড়ে বিদেশিদের ঠাঁই হয় জেলেই। কিন্তু কারাবাসের মেয়াদ শেষে যে-সব বিদেশি নিজের দেশে ফিরতে পারেন না, সেই ‘জানখালাস’ বন্দিদের কোথায় রাখা হবে? এই সমস্যার সুরাহা করতে নিউ টাউনে তৈরি হতে চলেছে ‘ডিটেনশন সেন্টার’ বা বন্দি শিবির। এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জিকে ঘিরে যে-‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ বা অনাগরিক শিবিরের পরিকল্পনা চলছে, জানখালাসদের এই শিবিরের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের কারাকর্তারা।
বন্দির সংখ্যা বেড়ে চলায় রাজ্যে জেল বাড়ানোর কাজ চলছে। এখন জেলেই রয়েছেন বিদেশি ‘জানখালাস’ বন্দিরা। তাঁদের আলাদা ভাবে রাখার জন্যই তৈরি হচ্ছে ‘বন্দি শিবির’। কারা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দু’টি বন্দি শিবির গড়া হবে। একটি বাংলাদেশিদের জন্য। অন্য শিবিরে ঠাঁই হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, জিম্বাবোয়ে, পাকিস্তান, মায়ানমারের মতো দেশের জানখালাস বন্দিদের। তাঁদের জন্য নিউ টাউনের ইকো পার্ক থেকে কিছুটা দূরে মেজর আর্টেরিয়াল রোডে তিন একর জমিতে শিবির গড়া হচ্ছে। জমি বাছাইয়ের কাজ প্রায় চূড়ান্ত। হিডকো থেকে কারা দফতরের অধীনে আসবে ওই জমি।
বাংলাদেশিদের জন্য বন্দি শিবির তৈরি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কারণ, কারাকর্তারা প্রাথমিক ভাবে বনগাঁয় যে-জমি পরিদর্শন করেন, তার চরিত্র বন্দি শিবির গড়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে কারা দফতরের খবর।
কিন্তু দু’টি পৃথক বন্দি শিবির কেন? কারা দফতরের ব্যাখ্যা, বাংলাদেশিদের ভাষা ও খাদ্যাভাসের সঙ্গে অন্যান্য বিদেশির ভাষা ও খাদ্যাভ্যাসের মিল নেই। তাই দু’টি শিবির গড়লে দু’পক্ষের সুবিধা হবে। তাই পৃথক শিবির তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে।
জানখালাসদের মধ্যে বাংলাদেশি প্রায় ৮০ শতাংশ। এখন দক্ষিণবঙ্গের জন্য দমদম সেন্ট্রাল জেল এবং উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে অস্থায়ী বন্দি শিবির রয়েছে। অস্থায়ী বন্দি শিবিরে বাংলাদেশি এবং অন্য বিদেশিদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে। পুজো এবং অন্যান্য কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় জানখালাস বন্দিদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। তাই অস্থায়ী শিবিরে জানখালাস বন্দির সংখ্যা এই মুহূর্তে বেশি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
এনআরসি-কে ঘিরে উদ্বেগ-আতঙ্কের মধ্যে ডিটেনশন সেন্টার নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক চলছে। জানখালাসদের জন্য ডিটেনশন সেন্টার তৈরির উদ্যোগ সেই বিতর্কে জলবাতাস দিতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অনেকের আশঙ্কা। কারা দফতরের কর্তারা এই আশঙ্কা খারিজ করে দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘অনেক আগেই এই ডিটেনশন সেন্টার গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর সঙ্গে এনআরসি-র সম্পর্ক খুঁজতে গেলে ভুল হবে।’’