প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, স্বাধীনতার পরে স্থির হয়েছিল, কোনও রাজ্য প্রয়োজনের অর্ধেক আইএএস অফিসার পাবে ভিন্ রাজ্য থেকে। অর্ধেক হবেন সেই রাজ্যেরই। পরে নিরপেক্ষতার যুক্তিতে স্থির হয়, দুই-তৃতীয়াংশ অফিসার আসবেন অন্যান্য রাজ্য থেকে।
ফাইল চিত্র।
কাজ করবেন বাংলায়। তাই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে আইএএস, আইপিএস ও ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস অফিসারদের আরও ব্যাপক ও গভীর ধারণা তৈরির উদ্যোগ চলছে। সেই জন্য সদ্য কাজে যোগ দেওয়া আমলাকুলের জন্য ইতিমধ্যে পাঠ্যক্রম সংশোধন করেছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এটিআই)। ঠিক হয়েছে, প্রশিক্ষণ পর্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিজ্ঞজনেরা তাঁদের বিভিন্ন বিষয় পড়াবেন। এটিআইয়ের খবর, শুধু সর্বভারতীয় অফিসার নন, রাজ্যের সিভিল সার্ভিসে (ডব্লিউবিসিএস) নবনিযুক্ত অফিসারেরাও এই প্রশিক্ষণ পাবেন।
সর্বভারতীয় পেশার অফিসারেরা মসূরীতে প্রশিক্ষণ শেষে রাজ্যের ক্যাডারে যোগ দেন। তখন এটিআইয়ে তাঁদের আরও একটি প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে এত দিন সরকারি কাজকর্ম, আইনকানুন, অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন প্রবীণ আইএএস অফিসারেরা। এটিআই-কর্তারা জানান, তাতে কর্মস্থল তথা রাজ্যের সম্পর্কে নতুন অফিসারদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা তৈরি হচ্ছিল না। তাই প্রশিক্ষণ-পাঠ্যক্রম সংশোধন করে বঙ্গের শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, অর্থনীতি, ভৌগোলিক গুরুত্বের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যক্রমে এই সংশোধন চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রবীণ আইএএস অফিসারদের পাশাপাশি এ বার ইতিহাসবিদ সুগত বসু, গৌতম ভদ্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুমার রানা, অন্তরা দেবসেন, অচিন চক্রবর্তী, শুভাপ্রসন্ন, অজয় চক্রবর্তী, কল্যাণ রুদ্রের মতো ব্যক্তিরা নতুন অফিসারদের পড়াতে রাজি হয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতা ও এটিআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন, বাংলার প্রশাসকদের বাংলার বৈচিত্র সম্পর্কে সংবেদনশীল করে তোলা হোক। সে-ভাবেই পাঠ্যক্রম
সাজানো হয়েছে।”
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, স্বাধীনতার পরে স্থির হয়েছিল, কোনও রাজ্য প্রয়োজনের অর্ধেক আইএএস অফিসার পাবে ভিন্ রাজ্য থেকে। অর্ধেক হবেন সেই রাজ্যেরই। পরে নিরপেক্ষতার যুক্তিতে স্থির হয়, দুই-তৃতীয়াংশ অফিসার আসবেন অন্যান্য রাজ্য থেকে। বাঙালি আইএএস অফিসারের সংখ্যা কার্যত হাতেগোনা বলেই এখন বেশির ভাগ অফিসার আসছেন অন্য রাজ্য থেকে। বাংলার সার্বিক দিক সম্পর্কে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা না-থাকাই স্বাভাবিক। আবার সেই সম্যক ধারণার অভাবে জনস্বার্থে বিভিন্ন কাজকর্ম করতে গিয়ে সংবেদনশীলতায় কিছুটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ ধারণা না-থাকলে রাজ্যের উন্নয়নে কোথায় কী প্রয়োজন, তার যথাযথ পরিকল্পনা করাও মুশকিল। তাই পাঠ্যক্রম সংশোধনের এই সিদ্ধান্ত।
আজ, বুধবার এটিআইয়ে নতুন অফিসারদের জন্য ‘আর্ট অব বেঙ্গল-হিস্ট্রি, ট্রাডিশন অ্যান্ড ট্রানজ়িশন টু মডার্নিজ়ম’ নামে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে।