ফাইল চিত্র।
মেয়ের যখন মাস পাঁচেক বয়স, তখনই মেদিনীপুরে পাঠানো হয়েছিল শিক্ষক-চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্যকে। ২০১৩-র অগস্ট থেকে প্রায় আট বছর সেখানে কাটানোর পরে, অটিজমে আক্রান্ত মেয়ের জন্য বাড়ির কাছাকাছি বদলি চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। লাভ হয়নি। বদলে, ডায়মন্ড হারবারে বদলি করা হয়েছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস’-এর ওই চিকিৎসককে।
সোমবার তাঁর মৃত্যুর পরে, পরিচিতরা বলছেন, ‘‘এখনও হয়তো অনলাইনে অবন্তিকার আবেদনটির ‘স্টেটাস পেন্ডিং’!" যেমন ভাবে রাজ্যের অনেক চিকিৎসক দীর্ঘ দিন ধরে আবেদন করলেও স্বাস্থ্য দফতরের বদলি-নীতিতে সমস্যার শিকার হয়ে প্রান্তিক জায়গাতেই রয়ে গিয়েছেন বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। তাঁদের দাবি, ‘‘স্রেফ খুঁটির জোরে কেউ সারা জীবন কলকাতায় কাটিয়ে দেন। আবার কাউকে শুধু জেলাতেই ঘুরতে হয়।’’ যদিও স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সূত্রের খবর, রাজ্যে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ সার্ভিস’-এর আওতায় ‘নো ইওর ডক্টরস’ এবং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস’-এর আওতায় 'নো ইওর ফ্যাকাল্টি' নামে দু’টি পোর্টাল রয়েছে। বদলির জন্য অফলাইনে আবেদনের পাশাপাশি অনলাইনে ওই পোর্টালেও তা আপলোড করা হয়। চিকিৎসক মহলের একাংশের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে ওই আবেদনের ‘স্টেটাস পেন্ডিং’ দেখায়। স্থাস্থ্য ভবনে ‘দরবার’ করেও ফল মেলে না।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’এ-র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘অতীতে বদলিতে নিয়ম মানা হত। জ়োন ভাগ ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময় কাজের পরে নিজের জেলায় ফেরা যেত। এখন স্বজনপোষণই নিয়ম। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়ে রয়েছেন। এমনকি, এক কোভিড-শহিদের চিকিৎসক-স্ত্রী স্বাস্থ্য প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরলেও বদলির আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম'-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি রাজীব পাণ্ডে বলেন, ‘‘যোগ্য প্রার্থীর নিয়মমাফিক বদলি-পোস্টিং হচ্ছে না। আবার বিধায়ক-মন্ত্রীর যোগ্যতাহীন ছেলে-মেয়ের প্রথম পোস্টিং হচ্ছে রাজ্যের এক নম্বর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। বদলি-পোস্টিংয়ের জন্য স্বজনপোষণ
লেগেই রয়েছে।’’
সূত্রের খবর, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ সার্ভিস’-এর ক্ষেত্রে এ-বি-সি-ডি জ়োন হয়। স্বাস্থ্য দফতর দূরত্ব ও দুর্গম জায়গা অনুযায়ী জ়োন চিহ্নিত করে। অভিযোগ, চিকিৎসকদের
একাংশ সারা জীবন শেষ তিনটি জ়োনের মধ্যে বদলি হন। আবার কেউ কেউ প্রথম থেকেই কলকাতা অর্থাৎ এ-জ়োনে থেকে যান। একই রকম ভাবে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস'-এ বাঁকুড়া এবং উত্তরবঙ্গের জেলা নিয়ে একটি জ়োন, আবার কলকাতা ছাড়া বর্ধমান, মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা-সহ অন্যান্য জেলা নিয়ে দক্ষিণবঙ্গ জ়োন রয়েছে। স্বাস্থ্য মহলের একাংশের অভিযোগ, আগে প্রথা ছিল, দুটি জ়োন মিলিয়ে ৫ বছর চাকরি করে কলকাতা কিংবা নিজের জেলাতে যাওয়া যাবে। কিন্তু বহু বদলির ক্ষেত্রেই ‘হস্তক্ষেপ’ করছেন এক দল চিকিৎসক। যাঁদের অধিকাংশ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করায় তাঁদের ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ বলেও চেনেন অনেকেই।
তবে এ সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ মহল। এক কর্তার দাবি, ‘‘সবাই যদি কলকাতায় থাকবেন, তা হলে জেলার হাসপাতালে কারা যাবেন। জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিও তো ভাল ভাবে চালাতে হবে। যে কোনও চাকরিতেই জেলাতে বদলি নীতি রয়েছে। তবে কেউ যথাযথ কারণে আবেদন করলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’