নিয়মের নিয়োগেই শান্ত পড়শিরা

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কয়েকটি ন্যূনতম সাধারণ নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (এনসিটিই)। তার ভিত্তিতেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশার মতো পড়শি রাজ্যগুলি প্রাথমিক বা উচ্চপ্রাথমিকে কয়েক বার শিক্ষক নিয়োগ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কয়েকটি ন্যূনতম সাধারণ নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (এনসিটিই)। তার ভিত্তিতেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশার মতো পড়শি রাজ্যগুলি প্রাথমিক বা উচ্চপ্রাথমিকে কয়েক বার শিক্ষক নিয়োগ করেছে। কিন্তু বিহার বাদে কোনও রাজ্যেই দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অস্বচ্ছতার তেমন বড় কোনও অভিযোগ নেই।

Advertisement

এনসিটিই-র নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রাথমিকে শিক্ষকতার চাকরি পেতে গেলে উচ্চমাধ্যমিকে নিদেনপক্ষে ৫০% নম্বর এবং দু’বছরের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। রাজ্যগুলিকে টেট চালু করে প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করতে হবে। তার পর টেট-এর স্কোর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার মান যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১০% এর বেশি নম্বর রাখা যাবে না।

এই নির্দেশ মেনে ঝাড়খণ্ডে টেট পরীক্ষা হয়েছিল গত বছর ২০ নভেম্বর। সে রাজ্যের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অরবিন্দ প্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘চলতি মাস বা মার্চের প্রথম সপ্তাহে টেটের ফল প্রকাশিত হবে। মোট ২ লক্ষ ৩৫ হাজার পরীক্ষার্থী। তাঁদের আবেদন করা থেকে পরীক্ষার ফল প্রকাশ — গোটা কাজটাই হয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে। এখানে ব্যক্তির প্রায় কোনও ভূমিকা নেই। তাই দুর্নীতির সুযোগ নেই, তেমন অভিযোগও ওঠেনি।

Advertisement

এ রাজ্য - অন্য রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবেশী রাজ্য

টেট এর খাতা দেখানো হয়নি ওয়েবসাইটে আছে

মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে শুধু বিহার নিয়েছে

তালিকা প্রকাশ এখানে হয়নি ওয়েবসাইটে আছে

শিক্ষাগত যোগ্যতার ৩৫ নম্বর ৫০ বা তার বেশি

স্বচ্ছতার প্রশ্নে কাউন্সিল-প্রধান অরবিন্দ প্রসাদ জানান, অনলাইনে আবেদনের পর কোনও পরীক্ষার্থীকে তাঁর নিজের জেলার পরীক্ষাকেন্দ্র বসতে দেওয়া হয়নি। আবার আইন শৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে, এমন জেলাতেও পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ‘অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন’ বা ওএমআর সিটের মাধ্যমে উত্তর লিখেছেন পরীক্ষার্থীরা। মৌখিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। উত্তরপত্রের কার্বনকপি প্রার্থীরা বাড়ি নিয়ে যান। মাসখানেক আগে কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে মডেল উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে নিজেদের করা উত্তর মিলিয়ে দেখতে পেরেছেন পরীক্ষার্থীরা। টেটের ফল প্রকাশের পর কাউন্সেলিংয়ের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রকাশিত হবে।

ত্রিপুরায় প্রথম বার টেট হয়েছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ামক প্রত্যুষরঞ্জন দেব জানান, যে দিন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়েছিল, সে দিনই পরীক্ষার্থীর ‘ওএমআর’ শিট ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সবাই নিজের খাতা দেখে নিয়েছেন। যাঁরা টেট পাশ করেন, তাঁদের নিয়োগ পেতে আর নতুন করে ইন্টারভিউ দিতে হয়নি। এনসিটিই-র নিয়ম মেনে টেটের নম্বর আর শিক্ষাগত যোগ্যতা মান অনুযায়ী মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে তাই অনিয়মের অভিযোগ ওঠা মুশকিল।

অসমে টেট শুরু হয়েছে ২০১২ সাল থেকে। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে লিখিত পরীক্ষা এবং প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার মান যাচাই করেই নিয়োগের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, নিয়োগ নিয়ে কিছু জটিলতা থাকলেও টেট নিয়ে অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতির কোনও অভিযোগ ওঠেনি এখনও।

আরও পড়ুন: এ বার লাগাম বিধায়ক মন্ত্রীদের বিলেও

ব্যতিক্রম অবশ্য বিহার। সেই রাজ্যে ২০১১ থেকে এখনও পর্যন্ত দু’বার টেট হয়েছে। দু’বারেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে এবং নানা আইনি জটিলতায় এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি। পাশাপাশি, গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতি (এই সংস্থাই রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং টেট পরীক্ষা নিয়ে থাকে) চেয়ারম্যান লালকেশ্বর প্রসাদ ও সচিব হরিহর ঝা-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। টেট পরীক্ষার সময়ে এই হরিহরবাবুই সংস্থার আধিকারিক ছিলেন। এই রাজ্যে ৫০ নম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং ৫০ নম্বর শিক্ষাগত যোগ্যতার মান যাচাই করে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অশোক চৌধরি বলেন, ‘‘আমরা সমস্যা মিটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার চেষ্টা করছি।’’

শিক্ষকমহলের মতে, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি থেকে স্পষ্ট, টেটের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ তোলার বিশেষ সুযোগ নেই। এবং ওই সব রাজ্যে নিয়ম-কানুন নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে অকারণ কোনও ধন্ধও তৈরি হয়নি। উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া, পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকা প্রকাশ — এ সবই স্বচ্ছতার দাবি রাখে, বলছে শিক্ষক মহলের একাংশ। এনসিটিই-র নিয়ম মেনে কেবল মাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের নিয়োগের ব্যবস্থা করায় ওই সব রাজ্যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কম ছিল। এবং এই কারণে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রায় সকলেই চাকরি পেয়েছেন।

কিন্তু এ রাজ্যে নিয়োগ-নিয়মের পরিবর্তন হওয়ায় গোটা ব্যবস্থা নিয়ে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন কলকাতা ও জেলায় বিক্ষোভে সামিল হচ্ছেন হাজার হাজার পরীক্ষার্থী। সমস্যা কোন পথে, কত দিনে মিটবে — বলতে পারছেন না শিক্ষা দফতরের কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement