আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের কাজ সেরে ফেলতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই উদ্যোগে কার্যত জল ঢেলে দিল কেন্দ্র।
রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গোটা দেশে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশিক্ষণকে (বিএড) বাধ্যতামূলক করেছে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন’ বা এনসিটিই। কিন্তু এই নির্দেশ মেনে শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ, রাজ্যে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষক বাড়ন্ত। বিশেষ করে বিজ্ঞান শাখায় এই সমস্যা প্রকট। তাই বহু শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না বলেই শিক্ষা দফতরের দাবি। এই সমস্যার সমাধানে প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার জন্য দিল্লির দ্বারস্থ হয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। বুধবার কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যের এই আর্জি মানা এখন কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। রাজ্যকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
কেন্দ্রের এই নির্দেশে বিপাকে পড়েছে রাজ্য সরকার। এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে জেরবার রাজ্য বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করার অনুমতি পেলে ভোটের আগে এই পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেত বলে মনে করছেন শাসক দলের নেতারা। কিন্তু কেন্দ্র রাজ্যের প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ আপাতত হল না বলেই মনে করছেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা।
দফতরের এক কর্তা জানান, ২০১২ সালেই এনসিটিই বলেছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের আগে নিয়োগ করতে হবে। তখনই দেখা গিয়েছিল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দিয়ে সব শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। এই কারণে রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণ না পাওয়া আবেদনকারীদেরও শিক্ষক পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আদালতে এর বিরুদ্ধেই মামলা করেন প্রশিক্ষিতরা। এর পরেই মামলা চলার সময়ে নিয়োগের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। তারপরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি (উচ্চপ্রাথমিক) ও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি— এই দু’টি পর্যায়ে ভাগ হয়ে যায় পরীক্ষা। ২০১৪ সালে এনসিটিই জানিয়ে দেয়, প্রথম পর্যায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরই শিক্ষকপদে নিয়োগ করতে পারবে সরকার। অর্থাৎ, প্রশিক্ষণ না থাকলে কোনও আবেদনকারীকেই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে নিয়োগ করা যাবে না। এর পরেই কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয় রাজ্য শিক্ষা দফতর। কিন্তু আবেদনের পরেও শূন্য হাতে ফিরতে হল রাজ্যকে।
এ দিন মন্ত্রক অবশ্য জানাচ্ছে, এর আগেও প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু মানবসম্পদ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করায় প্রশিক্ষণে ছাড় দিয়েছিল মন্ত্রক। ফলে ভবিষ্যতে ফের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের আগে যে তা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় তা এক রকম স্পষ্ট।
রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, এই স্তরে প্রায় ১৭ হাজার শূন্যপদ সৃষ্টি হয়েছে। শীঘ্রই এই পদে নিয়োগ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ বিষয়ের এই জটিলতার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরকেই দিয়ে যে ওই শূন্যপদ পূরণ করা যাবে না এ বিষয়ে কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছে দফতর?
স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘২০১২ সালের অভিজ্ঞতা থেকেই এনসিটিই-কে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কত জন বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের ফর্ম পূরণ করবেন, সেখান থেকে কত জন পাশ করতে পারবেন, পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে ভাবে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।’’ যে কারণেই ওই আবেদন বলে জানান তিনি।
কিন্তু এনসিটিই থেকে নেতিবাচক উত্তর পাওয়ার পরে কী করবে রাজ্য?
এ বিষয়ে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে ধাক্কা খাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। দফতরে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ঠিক করা হবে।’’