অন্ধকার আন্তর্জালে মাদক-চক্র

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিংয়ে’র ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত জানালেন, ‘হোয়াইট ওয়েব’ অর্থাৎ গুগল, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার গোটা নেট দুনিয়ার মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকিটা ‘ডিপ ওয়েব’।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

জাল ফেলে মাদক চক্রের জাল ধরা তো দূর, ‘হোমওয়ার্কে’ই আটকে গিয়েছে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। গত ডিসেম্বরের পর থেকে শহরে সে ভাবে কোনও মাদকপাচারকারীকে ধরতে পারেননি এনসিবি’র তদন্তকারীরা। এর কারণ হিসাবে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার, বিশেষ করে ‘ডার্ক ওয়েবের’ ধাঁধায় আটকে গিয়ে শ্লথ হয়ে গিয়েছে তাঁদের তদন্ত। ফলে ‘হোমওয়ার্ক’ হিসাবে অন্য বিষয়গুলির উপরে জোর দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

এমনিতে অপরাধে যুক্তদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ইন্টারনেটে লাগাতার নজরদারি চালিয়ে মাদকচক্রীদের মাদক-সহ গ্রেফতার করে এনসিবি। ওই পাচারকারীরা কাদের সঙ্গে মিশছে, নজর থাকে সে দিকেও। এই পথেই গত ডিসেম্বরে বড়দিনের আগে শহরে পাঁচ জন মাদকপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছিলেন এনসিবি তদন্তকারীরা। সেই সময় শহরের স্কুল-কলেজে মাদকচক্রের জাল বিস্তৃত বলে জেনেছিলেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সরাসরি মাদকদ্রব্য আমদানি করছেন কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা। একাধিক স্কুল-কলেজকে এ নিয়ে সচেতনও করেছিল এনসিবি।

তবে তার পর থেকে সে ভাবে শহরে কোনও মাদক সংক্রান্ত গ্রেফতারি নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এনসিবি’র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ডার্ক ওয়েবে আমরা কোনও সুবিধাই করতে পারছি না। ফলে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। তবু তথ্য সংগ্রহ এবং অন্য বিষয়গুলি নিয়ে হোমওয়ার্কে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

ডার্ক ওয়েব

‘টর ব্রাউজারে’র মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া নেট সার্ফিংয়ের এক বিশেষ ব্যবস্থা। এই ব্রাউজার ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস সেভ করে না। ফলে এক বার ‘লগ অফ’ করে দিলে ব্যবহারকারীর পরিচয় জানতে পারা প্রায় অসম্ভব।

এখনই ‘ডার্ক ওয়েবে’র সমাধান করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সাইবার বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশই। তাঁরা জানান, ‘টর ব্রাউজারের’ মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া ডার্ক ওয়েবের শেষ কথা গোপনীয়তা। যেহেতু এই ব্রাউজার ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস সেভ করে না, ফলে এক বার লগ অফ করে দিলে ব্যবহারকারীর পরিচয় জানতে পারা প্রায় অসম্ভব। আর এই সুযোগেই পরিচয় গোপন রেখে বেআইনি কাজকর্ম চলে। অবাধে বিক্রি হয়, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে মাদক, যৌন পণ্য থেকে দামি জিনিস।

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিংয়ে’র ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত জানালেন, ‘হোয়াইট ওয়েব’ অর্থাৎ গুগল, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার গোটা নেট দুনিয়ার মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকিটা ‘ডিপ ওয়েব’। ‘ডিপ ওয়েব’-এর সব অনৈতিক কাজ হয় এই ‘ডার্ক ওয়েব’-এ। সন্দীপের কথায়, ‘‘গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে বাক স্বাধীনতার জন্য এই ধরনের ওয়েবের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। তবে গোপনীয়তার ভাল-খারাপ দুই-ই রয়েছে। অপরাধ হলে তখন সেই গোপনীয়তাই আইনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ জন্যই তদন্তকারীরা দোষীদের ধরতে পারছেন না।’’

তা হলে উপায়? এনসিবি-র অধিকর্তা দিলীপবাবু বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার বিশেষজ্ঞেরা কাজ চালাচ্ছেন। দ্রুত ডার্ক ওয়েবসাইটের রহস্য সমাধান হবে।’’ সন্দীপবাবু আরও একটি রাস্তার কথা বলছেন। তাঁর মতে, ডার্ক ওয়েবে ঢুকে কাজ শুরুর আগে পর্যন্ত ব্যবহারকারীর তথ্য আই পি অ্যাড্রেসে সেভ থাকে। সেই সময়েই নজরদারি চালিয়ে ডার্ক ওয়েব-এর ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিকম কোম্পানিগুলোকে দিয়ে ডার্ক ওয়েবে কারা ঢুকছে সেই তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তা হলেই সব তথ্য চলে আসবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement