সুন্দরবনে পরিবেশ বিধিভঙ্গ, রাজ্যের গড়িমসিতে অসন্তুষ্ট গ্রিন ট্রাইব্যুনাল

গদখালিতে নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি হওয়া রাজ্য সরকারের বাড়ি ভাঙতে বারবার নির্দেশ দিয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু সে নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। সরকারের এই গড়িমসি মনোভাবেই সোমবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৭:৩৩
Share:

গদখালিতে নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি হওয়া রাজ্য সরকারের বাড়ি ভাঙতে বারবার নির্দেশ দিয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু সে নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। সরকারের এই গড়িমসি মনোভাবেই সোমবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই বাড়ি ভাঙা নিয়ে পদক্ষেপ করা না হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement

সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছিল কলকাতার ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের (জাতীয় পরিবেশ আদালত) পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ। সেই মামলাতেই সুন্দরবনের দূষণের পাশাপাশি উপকূলীয় বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল। গদখালিতে গড়ে ওঠা সরকারি বাড়িটিও সেই বিধি ভেঙে গড়ে উঠেছে বলেই আদালত জানায়। তার ভিত্তিতেই মুখ্যসচিবকে ওই বাড়ি ভেঙে ফেলা নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশ আদালতে এ নিয়ে বারবার শুনানি হলেও বাড়িটি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন।

এ দিন ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, বাড়িটি ভাঙা নিয়ে সরকার কী করছে, তা ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সুন্দরবনে উপকূলীয় বিধি ভেঙে আর কোন কোন নির্মাণ হয়েছে, সে ব্যাপারেও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

সুন্দরবনের মামলায় পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তকে ‘আদালত-বান্ধব’ হিসেবে নিয়োগ করেছে ট্রাইব্যুনাল। তিনি সুন্দরবন ঘুরে ৫১টি ছবি-সহ একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। সুভাষবাবু জানান, ওই রিপোর্টে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। তার মধ্যে ঝড়খালিতে কুমিরের ডিম পাড়ার মতো সংবেদনশীল জায়গা রয়েছে। সজনেখালি ট্যুরিস্ট লজেও বিধি ভেঙে নির্মাণ হচ্ছে। সুন্দরকাঠি, চুইকাঠিতেও পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। মাতলা নদীতে বেআইনি ভাবে বালি তোলার ঘটনাও তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালত মুখ্যসচিবের কাছে ব্যবস্থাগ্রহণের রিপোর্ট (অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট) তলব করেছে। সজনেখালি ট্যুরিস্ট লজ নিয়েও পর্যটন দফতরের কাছে হলফনামা চেয়েছে আদালত।

সুন্দরবনের দূষণ মামলায় এর আগেই বেআইনি হোটেল নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বেআইনি হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। সে সময় বেশ কয়েকটি হোটেল বন্ধ করা হয়। পরে পর্ষদের ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’-র কাছে আর্জি জানান কয়েকটি হোটেলের মালিকেরা। এ দিন আদালতে পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী বলেন, ‘অ্যাপীলেট অথরিটি’ ১৪টি হোটেলকে ফের খোলার নির্দেশ দিয়েছে। বাকি যে বেআইনি হোটেল রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সুন্দরবন এলাকাকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। অর্পিতাদেবীর বক্তব্য শোনার পরে পরিবেশ আদালত জানায়, বেআইনি হোটেলের তালিকা এবং ১৪টি হোটেল খোলা নিয়ে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সুন্দরবন এলাকার সব হোটেলের তালিকা পর্ষদকে দেওয়ার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement