(বাঁ দিকে) প্রিয়ঙ্ক কানুনগো ও দিব্যা গুপ্ত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মালদহে নাবালিকার গলা কেটে খুনের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করল জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর)। নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পুলিশি তদন্তের অভিযোগ তুলল তারা। এ নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তাঁর বক্তব্য, মালদহের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।
এই প্রথম নয়, অতীতেও বিভিন্ন ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে জাতীয় শিশু কমিশনকে। কলকাতার তিলজলার একটি ঘটনার তদন্তে এসে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়ের সঙ্গে সরাসরি ঝামেলায় জড়াতে দেখা গিয়েছিল জাতীয় শিশু কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগোকে। তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল। মালদহের একটি ঘটনাতেও কেন্দ্র ও রাজ্য— দুই কমিশনের বিবাদ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন ওই একই সময়ে। মালদহে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী খুনের ঘটনায় জাতীয় শিশু কমিশন রবিবার রাজ্য প্রশাসনকে আবার যে ভাবে কাঠগড়ায় তুলেছে, তাতে নতুন করে সংঘাতের ইঙ্গিত পাচ্ছেন অনেকে। ঘটনাচক্রে, শনিবারই নাবালিকার বাড়িতে গিয়েছিল রাজ্যের কমিশনের একটি দল।
প্রায় দু’দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর বুধবার গভীর রাতে মালদহ শহরের আমবাজার থেকে নাবালিকার মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। পরে কাটা মাথাও উদ্ধার হয় দেহ থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত গুদামঘরের ছাদ থেকে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে নাবালিকা খুনে ইতিমধ্যেই শ্রীকান্ত কেশরী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবক ইতিমধ্যেই খুনের কথা স্বীকার করেছেন। খুনের ঘটনায় আর কেউ কোনও ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন কি না, তার তদন্তও চলছে। তার মধ্যেই রবিবার নিহত নাবালিকার বাড়িতেই যায় জাতীয় শিশু কমিশনের একটি দল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলার কমিশনের ওই দলটি সরাসরি পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। পাশাপাশিই কমিশনের বক্তব্য, নাবালিকা যৌন নির্যাতনের স্বীকার কি না, সেই ব্যাপারেও পুলিশ স্পষ্ট করে কোনও রিপোর্ট দিতে পারছে না। খুনে ব্যবহৃত চাকুও এখনও খুঁজে বার করতে পারেনি পুলিশ।
কমিশনের সদস্য দিব্যা গুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশি তদন্তে আশ্বাস নেই। পুলিশের তদন্তে গাফিলতি রয়েছে। ২৯ তারিখ নিখোঁজ হয়েছিল নাবালিকা। তিন দিন সময় লেগে গেল? তাও আবার অভিযুক্তকে পরিবারের সদস্যেরাই পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। অভিযুক্তের একার পক্ষে ওই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।’’ এর জবাবে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী বলেন, ‘‘মালদহের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। এই ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবেই।’’
এ দিকে, মালদহের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শিশু কমিশনও। শনিবার নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন ওই কমিশনের সদস্য যশবন্ত শ্রীমানি। পরে তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযুক্ত তদন্তে পুলিশের সঙ্গে ঠিক ভাবে সহযোগিতা করছে না। আমরা এক জন মনোরোগবিদের সাহায্য নিতে বলেছি। আমরা মনে করছি, বিচারব্যবস্থাকে আরও কঠোর হতে হবে। তা না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। শিশুসুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সমস্ত জায়গায় আমরা আমাদের রিপোট পাঠাব। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সমস্ত রিপোর্ট আসলে তবেই তা পরিষ্কার হবে।’’